স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম শনিবার দ্বিতীয়বারের মত এ প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
এর আগে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের তখনকার মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও একবার ঘটা করে করে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু কাজ আর শুরু হয়নি।
জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে বন্দরনগরীর নাসিরাবাদ, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, বারইপাড়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া ও চাক্তাই এলাকার প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই খালের অপেক্ষায় আছে বহু বছর ধরে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) বর্তমান মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এবার ‘আশাবাদী’। তারা বলছেন, এবার কাজ মাঠে গড়াবে।
তবে প্রকল্পটিতে সিটি করপোরেশনের অংশের ব্যয় নির্বাহ কীভাবে হবে, তা এখনও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তারা।
মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজ হলে দেখবেন। হয়ে যখন যাবে, তখন দেখতে পাবেন। কাজ আরম্ভ হচ্ছে, দেখা যাক আল্লাহ কী করে।”
তার প্রায় দুই দশক পর ২০১৪ সালের জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন পায়।
তখন ঠিক হয়েছিল, ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।
কিন্তু সরকারি অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় প্রথম মেয়াদে প্রকল্পের কোনো কাজই করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করে আবারও অনুমোদন দেয়। সংশোধনে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। ব্যয় বেড়ে হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা।
সবশেষ চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করা হয়। তাতে ব্যয় বেড়ে হয় এক হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এই খাল খননে প্রায় ২৫ দশমিক ২৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যাতে খরচ হবে মোট এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
নিয়ম অনুসারে, পুরো অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসনকে দিতে হয়। আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও নিতে হয়। বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি ভাগ করা হয় পাঁচটি লটে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে তখনকার মেয়র আ জ ম নাছির প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও কাজ আর এগোয়নি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তখন জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পাঁচটি লটের মধ্যে একটি লটের জমি জেলা প্রশাসন আমাদের ইতোমধ্যে হস্তান্তর করেছে। আরেকটি লটের জমিও বুঝিয়ে দেবে শিগগিরই।
“বাকি তিন লটের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে। তবে ভূমি অফিসে আরও কিছু কাজ আছে। সেগুলো চলমান।”
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, জেলা প্রশাসন ২০ সেপ্টেম্বর ৬ দশমিক ৯৫ একর জমি হস্তান্তর করেছে।
প্রকল্প ব্যয় সাড়ে চার গুণ বৃদ্ধি এবং বারবার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আইনজীবী আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, “প্রকল্প একবার উদ্বোধনের পরও কাজ শুরু না হওয়া জনগণের সাথে তামাশা। এক গরুকে কয় বার কাটে? এটা তো বছর বছর গাছ কেটে খেজুরের রস আহরণের মত অবস্থা।
“দেখা যাবে হয়ত এবারও নির্ধারিত সময় ও ব্যয়ে এই কাজ শেষ হবে না। এত দীর্ঘ সময় পর এই খাল খননের সুফল আদৌ জনগণ পাবে কী?”
প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, “জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ আগে দেড় গুণ ছিল এখন তিনগুণ। তাই ব্যয় বেড়েছে।”
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূল জটিলতা জমি অধিগ্রহণ। খাল খনন তেমন জটিল নয়। দুপাশে রিটেইনিং ওয়াল ও রাস্তা করা হবে। আশা করি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে।”
এই প্রকল্পে সরকার দেবে ৯৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা। বাকি টাকা সিটি করপোরেশনের যোগানোর কথা।
সেই টাকার সংস্থান করপোরেশনের আছে কিনা জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল বলেন, “সাহস করে এগিয়ে গেলে কাজ আটকে থাকে না, হয়ে যাবে।”
বারইপাড়া হাইজ্জারপুল থেকে শুরু হয়ে খালটি নূর নগর হাউজিং, ওয়াইজের পাড়া, বলিরহাটের বলি মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিশবে।
খাল খনন শেষ হলে পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ শুলকবহর, চান্দগাঁও, মোহরা এব্ং পূর্ব ও পশ্চিম ষোলশহর এবং সংলগ্ন এলাকাসহ মোট আটটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন।