চট্টগ্রাম মেডিকেল: সেই আকিবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার পাশাপাশি আরও চারজনের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে, যাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2021, 03:52 PM
Updated : 23 Nov 2021, 03:58 PM

ওই চার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ অক্টোবর সকালে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া মাহাদি জে আকিবও আছেন। তবে তার বিরুদ্ধে এখনই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষের ‘সংঘাত থামাতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার জানান।

গত ২৯ অক্টোবর রাতে ও ৩০ অক্টোবর সকালে মেডিকেল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এরপর কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি সোমবার প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বিবাদমান দুটি পক্ষকেই দায়ী করে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি গত দুই বছরের অন্য ঘটনার দুটি তদন্ত প্রতিবেদনও বিবেচনায় নেওয়া হয়।

৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছে। তারা হলেন- এইচ এম আসহাব উদ্দিন, অভিজিৎ দাশ, সাদ মোহাম্মদ গালিব, সাজেদুল ইসলাম হৃদয়, সৌরভ ব্যাপারী, জাহেদুল ইসলাম জিসান, ইমতিয়াজ আলম ও মো. সাইফ উল্লাহ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে একটি পক্ষ সাবেক মেয়র নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। এ পক্ষটিই দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বজায় রেখেছে।

অন্য পক্ষটি প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। তার মৃত্যুর পর তারা নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়। যদিও সবশেষ ৩০ অক্টোবরের ঘটনার পর নওফেল দাবি করেন, তার কোনো পক্ষ সেখানে নেই।

দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত আটজনের মধ্যে দুই পক্ষেরই চারজন করে রয়েছে। তবে শাস্তি পাওয়া ৩০ জনের মধ্যে ২৩ জনই নওফেলের অনুসারী।

শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং ছাত্র সংসদের কক্ষ ভাংচুরের অভিযোগে দুজনকে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন- রিয়াজুল ইসলাম ও অভিজিৎ দাস। দুজনই নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সংঘর্ষ এবং কলেজের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় ২০ জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এরা হলেন- সাজু দাশ, রকিব উদ্দিন আহমেদ সিয়াম, জাকির হোসেন সায়েল, জুলকাফল মোহাম্মদ সোয়েব, মো. ইব্রাহিম খলিল, চমন দাশ অয়ন, ফারহান রহমান ফাহিম, মাহিন আহমেদ, শেখ ইমাম হাসান, সৌরভ দেবনাথ, মো. মইনুল হোসেন, আরাফাত ইসলাম, হাবিবুল্লাহ হাবিব, মো. আনিস, এহসানুল কবির রুমন, মাহতাব উদ্দিন রাফি, মো. শামীম, মো. সাব্বির, মইন ভুইয়া ও তৌফিকুর রহমান ইয়ন।

তাদের মধ্যে ১৬জনই ছাত্রলীগে নওফেল অনুসারী বলে এ পক্ষের নেতাকর্মীদের দাবি।

এছাড়া আল আমিন ইসলাম নামের একজনের সংঘাতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে তিনি শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে জানানো হয়েছে।

অধ্যক্ষ শাহেনা আক্তার স্বাক্ষরিত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বলা হয়- “অভিযুক্ত তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও সঙ্গত কারণে মো. মাহাদি আকিব, উৎস দে রক্তিম ও এনামুল হাসান সীমান্তের বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

তাদের মধ্যে গুরুতর আহত মাহাদি আকিব কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বাড়িতে আছেন। আর অন্য দুজন সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে।

৩০ অক্টোবর সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকিব। কলেজ ক্যাম্পাসের অদূরে পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারের সামনে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি।

তার ওপরে ধারালো অস্ত্র, রড, ছুরি ও কাঁচের বোতল নিয়ে হামলা চালানো হয়। মাথায় অস্ত্রোপচারের পর ১৯দিন তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়।

আকিবের পক্ষের নেতাদের দাবি, হাসপাতালকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, দালালি, স্লিপ বাণিজ্য, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটসহ নানা অবৈধ কারবারের ‘প্রতিবাদ করায়’ প্রতিপক্ষ আকিবের ওপর হামলা করে।

অধ্যক্ষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কমিটি আহত শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলেছে। ভিডিও দেখেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এসব ঘটনায় হওয়া মামলা বিবেচনায় নিয়েছে।

“সব বিবেচনায় ঘটনায় ৫০ জনের নাম এসেছে। তাদের কমিটি চিঠি দিয়ে জবাব দিতে বলেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ নিরাপত্তার কথা বলে জবাব দেয়নি। তবে আমাদের কলেজ খোলার বাধ্যবাধকতা ছিল, তাই তদন্ত কমিটির সময় আর বাড়ানো সম্ভব হয়নি।”

ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, “অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে এসব তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষকই চান না শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হোক। কিন্তু উপর্যুপরি সংঘাত ঘটুক এটাও আর কাউন্সিল চায় না। তাই সবাই মিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

কলেজ ছাত্রলীগে নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমন সিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই তদন্ত একপাক্ষিক। কমিটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। একটি পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানাব।”

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আ জ ম নাছির পক্ষের অনুসারীদের নেতা হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

অধ্যক্ষ শাহেনা আক্তার বলেন, “তদন্ত কমিটি চিঠি দেওয়ার পরও অনেকে জবাব দেয়নি। তারা এমনও মন্তব্য করেছে, কিছু হবে না। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কোনো পক্ষ দেখেনি। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে শুধুমাত্র যাদের বিষয়ে প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে কাউন্সিল সভায় সব শিক্ষকই ‘একমত ছিলেন’ বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ।

আরও পড়ুন: