মিতু হত্যা: বাবুলের মামলার অধিকতর তদন্তে পিবিআই, আপত্তি আইনজীবীর

মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার যে মামলাটি শুরুতে করেছিলেন, তার ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পিবিআইকেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এতে আপত্তি জানিয়ে বাবুলের আইনজীবী বলছেন, তারা তদন্ত সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করবেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2021, 03:18 PM
Updated : 9 Nov 2021, 03:18 PM

মিতুর বাবার মামলার আগে বাবুলের করা প্রথম মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।

তার গ্রহণযোগ্যতার শুনানি শেষে গত ৩ নভেম্বর মামলাটি নতুন করে তদন্তের আদেশ আসে চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের কাছ থেকে।

সেদিন বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানিয়েছিলেন, আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কোনো তদন্তকারী সংস্থা ঠিক করে দেননি।

তবে আদালতের লিখিত আদেশ প্রকাশের পর দেখা যায়, বাবুলের মামলাটি আগের তদন্ত কর্মকর্তাকেই (আইও) অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আগামী ১২ ডিসেম্বর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লিখিত আদেশে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মিতু হত্যার ঘটনায় ওই মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে ১২ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।”

মাহমুদা আক্তার মিতু

পাঁচ বছর আগের ওই হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে গত মে মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এর ভিত্তিতেই বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

অন্যদিকে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মাধ্যমে মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়েছিলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।

বাবুলের মামলার ইতি ঘটাতে পিবিআই’র দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারক। পাশাপাশি বাবুলের করা নারাজি আবেদনটিও নামঞ্জুর করেন আদালত।

নতুন মামলায় মোট আসামি বাবুলসহ নয়জন।

আইনজীবীরা বলছেন, একই অপরাধের ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না।

তবে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে, প্রথম মামলার পর তদন্তে ঘটনার ভিন্নতা, অপরাধের ভিন্নতা বা মামলায় উল্লেখ করা অপরাধ পরে ভিন্ন কোনো অপরাধে পরিবর্তিত হলে দ্বিতীয় মামলা করা যায়। উচ্চ আদালত বিভিন্ন সময় এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

কিন্তু এক্ষেত্রে তদন্তে মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরও বাদী (বাবুল) আসামি হিসেবে শনাক্ত হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়, যা দণ্ডবিধির ২৭৫ ধারার পরিপন্থি বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

আদশে বলা হয়- “সফল তদন্ত হয়েছে, মোটিভ শনাক্ত হয়েছে এবং আসামি শনাক্ত হয়েছে। দুজন সাক্ষী ও দুজন আসামির জবানবন্দি এবং সিসিটিভি ফুটেজ ও ব্যবহৃত কার্তুজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ হয়েছে।”

এসব কারণে মামলায় তদন্ত সংস্থার দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আইওকে মিতু হত্যার ঘটনায় অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিজ্ঞ আদালতের আদেশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আদালতের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো ক্ষেত্রে তদন্তে যদি বাদীকেই আসামি বলে প্রতীয়মান হয়, সেক্ষেত্রে বাদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ আনা যায়। তখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আইও বাদী হয়েই একটি মামলা করতে পারেন।

“এক্ষেত্রে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই বোঝা যাবে কী হচ্ছে। তখন যদি বাদী আসামি হন, তখন মামলার বাদী হিসেবে কে থাকবেন?”

এদিকে আদালতের আদেশ প্রকাশের পর বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, “আদেশে আগের আইওকে তদন্ত করতে বলেছে। আগামী রোববার আমরা আইও এবং তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করব।

“কারণ চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করলে এর অংশ বিশেষ গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে মত দেওয়ার সুযোগ নেই। আদেশের সার্টিফাইড কপি পেলে আলোচনা করে আমরা আবেদন করব।”

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই। কয়েক মাস পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয় তাকে।

পাঁচ বছর পর ওই মামলায় বাবুলকে পিবিআই হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গত ১৪ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন বাবুল আক্তার। সেই নারাজি আবেদনের উপর শুনানি হয় গত ২৭ অক্টোবর।

পুরনো খবর