ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে শনিবার বন্দরে কোনো কন্টেইনার আনা নেওয়া করা যায়নি বলে বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে; শঙ্কা তৈরি হয়েছে কন্টেইনার জট তৈরির।
ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়ে নিজেরা ক্ষতির সম্মুখীন তো হবেনই, সঙ্গে ভোক্তারাও এর শিকার হবেন বলে ব্যবসায়ীদের শংকা।
বুধবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির পর শুক্রবার থেকে যানবাহন না চালানোর ঘোষণা দেন মালিক-শ্রমিকরা।
সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও শুক্রবার গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। শনিবার সকাল থেকে এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরেও। পণ্য পরিবহনের জন্য সকাল ৬টার পর কোনো ট্রাক-লরি বন্দরে প্রবেশ করেনি ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে কোনো ডেলিভারি হচ্ছে না; বেসরকারি ডিপো থেকে কোনো কন্টেইনারও বন্দরে আসছে না। ধর্মঘট চলতে থাকলে সামনে কন্টেইনার জট দেখা দিতে পারে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা গড়ে ৪৯ হাজার টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনারকে একক ধরে)। শনিবার সকালে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে কন্টেইনার ছিল ৩৬ হাজারের মতো।
বন্দর কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, শনিবার বন্দর থেকে ডেলিভারি হবার কথা ১৫০০ টিইইউএস কন্টেইনার। কিন্তু গাড়ি না আসায় দুপুর পর্যন্ত কোনো ডেলিভারি হয়নি। শুক্র-শনিবারে কন্টেইনার ডেলিভারি কম হয়ে থাকে। সাধারণ সময়ে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজারের মতো।
সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসা জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার নামানো এবং অফডকগুলো থেকে আসা রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজে ওঠানো হয়ে থাকে। সাধারণ সময়ে বন্দরে প্রতিদিন গড়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠা-নামা) হয়ে থাকে সাত থেকে আট হাজার টিইইউএস। ধর্মঘটের কারণে ডেলিভারি না হওয়ায় হ্যান্ডলিংও কমে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে বর্তমানে জাহাজ রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে নয়টি কন্টেইনারবাহী, চারটি সারবাহী, দুটি সিমেন্ট ক্লিংকার এবং দুটি খাদ্যপণ্য বোঝাই। এছাড়া বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত ৪৪টি মাদার ভ্যাসেলে কাজ চলছে।
বন্দরে আসা জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামানোর পর বাইরে অফডকে (বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো) নিয়ে পণ্য খালাস করা হয়ে থাকে। এছাড়া অফডক থেকে রপ্তানিপণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরে আসে এবং জাহাজে বোঝাই হয়ে থাকে।
বন্দরের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে রপ্তানিপণ্যের কন্টেইনার আসছে না। বেশকয়েকটি জাহাজ খালি বসে আছে। এতে করে জাহাজের মাশুলও বাড়ছে।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, “ধর্মঘট আরও কয়েকদিন চললে বন্দরের ক্যাপাসিটি কমবে এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে ধীর গতি আসবে, জাহাজের গড় অবস্থানকালও বেড়ে যাবে।”
বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর মালিকদের প্রতিষ্ঠান বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপো থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজারের মতো কন্টেইনার বন্দরে যাওয়া-আসা করতো, যা ধর্মঘটের কারণে কমে গেছে।”
শনিবার অফডকগুলো থেকে একটি কন্টেইনারবাহী গাড়ি বন্দরে যায়নি বা সেখান থেকে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিপোগুলোতে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস। আজকে রয়েছে ৫২ হাজারের মতো। এমন পরিস্থিতে তিন-চারদিন হয়তো চালানো যাবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে, কন্টেইনার জট হবে।”
দেশের তৈরি পোশাকখাতের অধিকাংশ রপ্তানিপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিভিন্ন দেশে যায়। পরিবহন সংকটের কারণে বন্দরে পণ্য পাঠানো প্রায় বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতির কথা তুলে ধরে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের রপ্তানিমুখী কন্টেইনার বন্দরে যেতে পারছে না। যেসব জাহাজ পণ্য নেয়ার জন্য বন্দরে অপেক্ষা করছে সেসব খালি ফিরে যাবে। জাহাজ অপেক্ষমান থাকলে মাশুল বাড়বে। এর চাপ পড়বে বব্যসায়ীদের ওপর।
তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে তৈরি পোশাক খাতে ব্যবসার যে ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে উঠছিলাম। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সুনামও বেড়েছে। এমন সময়ে পরিবহন ধর্মঘট আমাদের জন্য আত্মঘাতী। ব্যবসার স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ধর্মঘটীদের নিয়ে বসে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা উচিত।”
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পণ্য পরিবহন বন্ধ মানে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। বন্দরে খালি জাহাজ বসে থাকলে সেটার ডেমারেজ ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ছে। এটার প্রভাব স্বাভাবিকভাবে ভোক্তার ওপর গিয়েই পড়বে। এটা কোনভাবেই ঠিক না।”
তিনি বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম হুট করে বাড়ানো যেমন ঠিক না। তেমনি কোন আল্টিমেটাম না দিয়ে পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট ডাকা উচিত নয়। দেশের স্বার্থে এ ধর্মঘটের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।”