বাবুলের আপত্তি টিকবে? আদেশ ৩ নভেম্বর

চট্টগ্রামের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তারের করা মামলায় পিবিআইয়ে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার তোলা আপত্তি টিকবে কি না, তা জানা যাবে ৩ নভেম্বর।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2021, 11:40 AM
Updated : 27 Oct 2021, 11:50 AM

বাবুল আক্তারের দেওয়া ‘নারাজি’ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান আদেশের এই দিন ঠিক করে দেন।

বাবুল আক্তার এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মিতুর বাবার করা মামলায় ‘স্ত্রী হত্যার’ আসামি হয়ে তিনি এখন ফেনী কারাগারে আছেন।

নারাজি আবেদনের শুনানিতে বাবুল আক্তার সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মাধ্যমে মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলাটির পুনঃতদন্ত চান।

তিনি বলেন, “আমার উপর অবিচার হচ্ছে। এই মামলার আমি বাদী। আমি স্ত্রী হত্যার বিচার চেয়েছি। ঘটনার সময় আমি চট্টগ্রামেও ছিলাম না। পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। মামলার পুনঃতদন্ত দাবি করছি।”

প্রায় পাঁচ বছর তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১২ মে ওই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সেদিনই মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা করেন, যাতে জামাতা বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “নারাজি বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত ৩ নভেম্বর আদেশের জন্য রেখেছেন।

“আরেকটি আবেদন আমরা করেছিলাম, এর আগে অতিরিক্ত এসপি বা এসপি পর্যায়ের তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ছিলেন। তারা বাবুল আক্তারের সহধর্মিনী মিতুর বাবা-মায়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরেও সেটা রেকর্ড করেননি।”

আইনজীবী সাইমুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলায় ৫১ জন সাক্ষীর ১৬১ ধারায় এবং ২ জনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা ৫ বছরেও পাওয়া যায়নি।

“তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচ বছর পরে দুজন লোককে এনে এই মামলায় বাবুল আক্তারকে সম্পৃক্ত করেছেন, যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। পাঁচ বছর পরে কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনগতভাবে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সিনিয়র অফিসররা মামলাটা তদন্ত করলেন। পরে জুনিয়র একজন অফিসার তিন মাস তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেন। অথচ সেটা বাদিকে (বাবুল) নোটিস দিয়ে জানানো হয়নি।”

আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর মিতু হত্যাকাণ্ডে ‘অস্ত্র সরবরাহকারী’ এহতেশামুল হক ভোলা গত ২৩ অক্টোবর বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হন। পরদিন ২৪ অক্টোবর তিনি মিতুর বাবার করা হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ বিষয়ে বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, “এর আগে ভোলা প্রায় চার বছর কারাগারে ছিল। তখন সে হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় কোনো জবানবন্দি দেয়নি। হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট একটি অস্ত্র মামলায় ১৬৪ করল, সেখানেও বাবুল আক্তার বিষয়ে কিছু বলেনি।

“বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাও আগের মামলাটিতে পাঁচ মাস তদন্ত করেছেন। তখন তো তিনি ভোলার জবানবন্দি নিতে কোনো আবেদন করেননি। এখন এমন কী ঘটে গেল যে ভোলা হঠাৎ করে মিতুর বাবার করা মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে সব বলা শুরু করল?”

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই।

আদালতের আদেশে পরে মিতু হত্যা মামলা যায় পিবিআইয়ের হাতে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়।

এর পরদিন ১২ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পেয়েছেন তারা।

ঢাকায় ওই সংবাদ সম্মেলনের পর সেদিনই চট্টগ্রামে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন পিবিআইর পরিদর্শক মামলার আইও সন্তোষ কুমার চাকমা।

এরপর ওইদিনই পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন একটি হত্যা মামলা করেন। যাতে বাবুলকে প্রধান আসামিসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়।

বাবুল ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে শাক্কু, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।

ওই মামলায় বাবুলকে পিবিআই হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গত ১৪ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন বাবুল আক্তার।