‘ইকবালকে পাগল সাজিয়ে দুর্বৃত্তদের আড়ালের অপচেষ্টা হচ্ছে’

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে আসা ইকবালকে পাগল সাজিয়ে আসল দুর্বৃত্তদের আড়ালের অপচেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিলন কান্তি দত্তের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2021, 02:09 PM
Updated : 25 Oct 2021, 02:09 PM

সোমবার বিকালে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগরীর আন্দরকিল্লার মোড়ে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে এ অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সারাদেশে হামলা হয়েছে। যারাই এই হামলার সঙ্গে যুক্ত হোক না কেন, সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা ইকবাল হোসেনকে পাগল সাজিয়ে আসল দুর্বৃত্তদের আড়াল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

“১৯৬৯ সালে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিল। সেই সাম্প্রদায়িক সংহিংসতা প্রতিরোধে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু এখনকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতারা, প্রগতিশীল সুশীল সমাজ রাস্তায় নেই।“

সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “পাকিস্তানি প্রেতাত্মা, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এসব প্রতিরোধে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের রাস্তায় নামতে হবে।“

তিনি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ আইজিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, নিরাপত্তায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। এরপরও মন্দিরে-পূজামন্ডপে হামলা হল, অগ্নিসংযোগ হল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হল।

‘‘আমরা দেখেছি, নোয়াখালীতে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, সংসদ সদস্য, প্রশাসন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা কোথায় ছিলেন? আমরা সরকারের আশ্বাস প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।’’

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন ও পুলক খাস্তগীর, মহানগর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার প্রমুখ।

দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি পূজা মণ্ডপে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

পুলিশ গত বুধবার নানুয়া দীঘির পাড়ের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে কোরআন রাখার ঘটনায় ইকবালকে শনাক্ত করার এক দিন পর তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার জেরে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে।