রিকশা নিয়ে চুরিতে ৩ ভাই

দুই ভাইকে যাত্রী সাজিয়ে বড় ভাই রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন অলিগলিতে। সুযোগ পেলেই তাদের একজন উঠে যান কোনো ভবনে। পাহারায় থাকেন অন্য দুই ভাই। চুরি করেই সটকে পড়েন সেখান থেকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2021, 11:52 AM
Updated : 25 Oct 2021, 11:52 AM

চট্টগ্রাম নগরীর একটি চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এ তিন ভাইসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি করা নগদ টাকা, ডলার, হীরা আংটি ও ব্রেসলেট ও কানের দুল।

গ্রেপ্তার তিন ভাই হলেন- মো. মঈনুদ্দীন, রহিম উদ্দিন ও ইব্রাহিম খলিল। এদের মধ্যে মঈনুদ্দীন ও রহিমকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। ইব্রাহিম আগেই গ্রেপ্তার হন।

রোববার মঈনুদ্দীনের স্ত্রী নয়ন তারা এবং মো. জাহাঙ্গীর নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসকার দিঘীর পাড় এলাকার একটি বাসায় গত ১১ অক্টোবর গভীর রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্তে তিন ভাইয়ের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

গত ১৩ অক্টোবর ইব্রাহীমকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে টানা অভিযান চালিয়ে অন্য দুই ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।

ওসি নেজাম বলেন, “রহিম রিকশা চালানোর আড়ালে চুরি করে থাকে। সে তার অপর দুই ভাই মঈনুদ্দীন ও ইব্রাহীমকে যাত্রীবেশে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন অলিগলিতে। সুযোগ বুঝে মঈনুদ্দীন সানশেড দিয়ে কোনো ভবনে উঠে জানালা কিংবা বারান্দার গ্রিল বাঁকা করে ঘরে ঢুকে। আর অন্য দুই ভাই পাহারায় থাকে। চুরি করা মালামাল তারা জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।”

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর রাতে আসকারি দিঘীর পাড়ের ‘এবিসি মাহবুব হিলস’ ভবনের সানশেড বেয়ে তৃতীয় তলায় উঠেন মঈনুদ্দীন। বারান্দার গ্রিল বাঁকা করে আমেরিকান প্রবাসী একজনের ঘরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার, নগদ টাকা ও ডলার চুরি করে নিয়ে যায়।

ওসি নেজাম জানান, “ওই বাসায় মঈনুদ্দীন একাই ঢুকেছিল। সে যে কোনো ধরনের গ্রিল পা দিয়ে বাঁকা করে ঘরে প্রবেশ করতে পারে। আগেও মঈনুদ্দীন চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। মাস খানেক আগে জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও চুরির কাজে জড়িয়ে পড়ে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার এসআই বাবলু পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওই বাসায় আবরারা বেগম নামে সত্তোরোর্ধ এক নারী ও গৃহকর্মী থাকেন। তার স্বজনরা সবাই আমেরিকা প্রবাসী।

আবরারা অভিযোগ করেছেন, তার বাসা থেকে ৩৫টি হীরার আংটি, চার জোড়া হীরার দুল, পাঁচটি হীরা ও স্বর্ণ মিশ্রিত ব্রেসলেট, নগদ তিন লাখ টাকা ও তিন হাজার ১০০ ইউএস ডলার চুরি হয়েছে।

এসআই বাবলু বলেন, “মঈনুদ্দীনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যে রহিমের কাছ থেকে ৩০০ এবং জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ৪০০ ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়।”

পরে মঈনুদ্দীনকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায় বাড়িতে আভিযান চালিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে নগদ এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা, ১৫টি আংটি, চার জোড়া দুল ও দুটি ব্রেসলেট উদ্ধার করা হয়।

মঈনুদ্দীনকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এসআই বাবলু বলেন, চুরির পর নগদ টাকা নিজের কাছে রাখলেও ডলার না চেনায় সে বিভিন্ন জনকে সেগুলো দিয়ে দেন এবং কিছু ফেলেও দেন।

চুরি করা মালামাল বিক্রি এবং নগদ টাকা দিয়ে মঈনুদ্দীন বাড়িতে ঘর তৈরির কাজে খরচ করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

অন্যান্য মালামাল উদ্ধারে মঈনুদ্দীন ও অন্যদের তিন দিনের জন্য রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।