শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রয়াত ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আসুন সমাজের মধ্যে পরিবর্তন আনি। আমরা ধর্মপরায়ন হতে চাই, ধর্মান্ধ হতে চাই না। ধর্মান্ধতা মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের মূল সংস্কৃতি লালন করি।
“ওয়াজের নামে মানুষকে ধর্মান্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, সেখান থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ইসলামী বক্তা আছে তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে ধর্মের ভালো দিকগুলো আপনারা ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে তুলে ধরুন। ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দিয়ে আমাদের ধর্মকে কলংকিত করবেন না।“
হানিফ বলেন, তরুণ-ছাত্র-যুব সমাজকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যার যার ধর্ম পালন করব। প্রিয় নবী প্রতিটি ধর্মের প্রতি সম্মান করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। অন্য ধর্মকে আঘাত করার কথা বলেননি।
“তারপরও কেন আজ এ সাম্প্রদায়িকতা? এর একটাই কারণ একটি পক্ষ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়।”
তরুণ সমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করুন।
তারেক সোলেমান সেলিম স্মরণসভা পরিষদ আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চারবারের নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিম এ বছরের ১৮ জানুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, “আমাদের লোক সংস্কৃতি সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন সে জায়গা দখল হয়েছে ওয়াজ মাহফিলে। আমরা মুসলমান। ইসলাম শান্তির ধর্ম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আমাদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফ। কিন্তু সেই ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীরা বারবার আমাদের ধর্মকে কলংকিত করেছে। একাত্তরে করেছে। পঁচাত্তরের পরও করেছে। এরপরও অনেকবার করেছে।“
পূজামণ্ডপে যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ রেখেছে সে ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘একজন মুসলমান আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে অন্যের ধর্মের মন্দিরে রেখে তাকে সম্মানিত করল নাকি অসম্মানিত করল? মুসলমান হয়ে মুসলমানের ধর্মকে অসম্মানিত করেছে। আর আমরাও হুজুগে বাঙালি ধর্মান্ধ।
“আমরা সেদিকে না দেখে অন্য সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি মন্দির ভাঙচুর করে আমরা দেখিয়ে দিলাম যে, কুরআনের প্রতি আমাদের কত সম্মান।‘‘
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান।
স্মরণসভা পরিষদের সদস্য সচিব জামসেদুল আলম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কে বি এম শাহজাহান, সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজুল হায়দার রোটন, আবু সাঈদ রাসেল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।