চবি ক্যাম্পাসে আবার প্রাণের মেলা

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ১৯ মাস বন্ধ থাকার পর সশরীরে পাঠদান শুরু হলে প্রাণ ফিরেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2021, 02:01 PM
Updated : 19 Oct 2021, 02:01 PM

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পদচারণা আর উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

দীর্ঘ বিরতির পর প্রিয় ক্যাম্পাসে যেতে শহর থেকে শাটল ট্রেনে যাত্রা শুরু থেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

ট্রেনের পাশাপাশি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যারা বাসে বা কাছের দূরত্ব থেকে রিক্সায় এসেছেন তারাও ক্যাম্পাসে এসে বন্ধুদের পেয়ে আনন্দে মেতেছেন। স্মৃতিমাখা পুরানো শ্রেণিকক্ষে ফিরে হাঁফ ছেড়েছেন।

দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আবেগে আপ্লুত হয়েছেন অনেকে। ক্লাসের বাইরে বন্ধুকে পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি ভুলে একে অপরকে আলিঙ্গন করতেও দেখা গেছে।

ক্লাস বা পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা কলা অনুষদের ঝুপড়ি, চাকসুর ক্যাফেটেরিয়া, সমাজ বিজ্ঞান ক্যাফেটেরিয়া, লেডিস ঝুঁপড়ি, জিরো পয়েন্ট, বোটানিক্যাল গার্ডেন পুকুর পাড় কিংবা বায়োলজিক্যাল ফ্যাকাল্টির পুকুর পাড় এলাকায় আড্ডায় মেতে ওঠেন সেই আগের দিনের মত। 

দীর্ঘদিনের জমে থাকা গল্প নিয়ে চলে নানা আলাপন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলোকে মনে করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উপলক্ষে দেয়ালে দেয়ালে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নানা নির্দেশনা টানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের বসতে হয়েছে নিরাপদ দূরত্বে, পড়তে হয়েছে মাস্ক। 

এর আগে সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হয়।

দেড় বছরেরও দীর্ঘ সময় পর শাটল ট্রেনে চড়ে শহর থেকে পাহাড় ঘেরা ক্যাম্পাসে এসেছেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিজয়া ভট্টাচার্য। 

তার কাছে, শাটল ট্রেন ভালোবাসার এক নাম। তিনি বলেন, গত দেড় বছরে অনেকবার বটতলি স্টেশনে শাটল ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেক খারাপ লেগেছে। উঠতে না পেরে খারাপও লেগেছে।

"অনেকদিন পর শাটল ট্রেনে চড়তে পেরেছি। অনেক ভালোলাগা কাজ করছে। সত্যি বলতে শাটল ট্রেন হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আড্ডা, গান এমনকি গ্রুপ স্টাডি সবই হয়।"

দীর্ঘ বিরতির পর সশরীরে ক্লাস করতে পেরে আনন্দিত বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অজয় ঘোষ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীর্ঘ বিরতির পর পুনরায় শ্রেণিকক্ষে ফিরে মনের সকল বিষাদ যেন নিমিষেই মুছে গেল।

"ঘরের ভিতর ১৮টি মাস অলসতার সাথে বেঁচে থাকাটা কষ্টকর। এতদিন পর স্শরীরে ক্লাস করা, বন্ধু-বান্ধবীর সাথে দেখা করার অনূভুতি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এ যেন দীর্ঘদিন পর স্বচ্ছন্দে নিশ্বাস নেওয়ার মতো। মনে হচ্ছে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছি।"

সশরীরে ক্লাস নিতে পেরে শিক্ষার্থীদের মত শিক্ষকরাও উচ্ছ্বসিত।

মঙ্গলবার শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করার পর বাংলা বিভাগের শিক্ষক লোকমান কবীর জানান, দীর্ঘদিন পর সশরীরে ক্লাস নিতে পেরে আমিও আনন্দিত। শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পাঠদানের তৃপ্তি কখনও অনলাইন ক্লাসে পাওয়া যায় না।

"ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা না করে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা করোনাভাইরাসকে যেমন মোকাবেলা করতে পারব, তেমনি স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল রাখতে পারব।"

মঙ্গলবার শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাশ শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১ জানুয়ারি থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপউপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহামারীতে সশরীরে ক্লাস না হলেও অনলাইনে সকল বিভাগের ক্লাস হয়েছে।

"ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ বিভাগের পরীক্ষা নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। সেশনজট কমাতে প্রয়োজনে সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হবে। অন্যান্য ছুটিও বাতিল করা হবে। তবুও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।"

তিনি বলেন, প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ করে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ক্লাস নেওয়া শুরু করব। যাতে নতুন শিক্ষার্থীদেরও সেশন জটের কবলে পড়তে না হয়। 

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অনলাইনে ক্লাস শুরু করে বিভাগগুলো।

এরপর অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে শনিবার থেকে শাটল ট্রেন চালু এবং সোমবার থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া কর্তৃপক্ষ।