শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
দেশব্যাপী হামলার প্রেক্ষাপটে সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাম্প্রদায়িক মহলের চক্রান্ত প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন দাবি করেন ঐক্য পরিষদের এই সাধারণ সম্পাদক।
দুর্গাপূজার শেষ তিন দিনে দেশব্যাপী কমপক্ষে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্যে জানানো হয়।
এসব হামলায় চার জন নিহত, কমপক্ষে ৭০ জন আহত, ৩০টি বাড়ি এবং ৫০টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এসব পরিসংখ্যান তুলে ধরে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “এসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আজ আর উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিশ্বাস করি এর সবটাই পরিকল্পিত।
সংবাদ সম্মেলন থেকে হামলার প্রতিবাদে ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত গণ অনশন ও গণঅবস্থান এবং হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ঢাকায় এ কর্মসূচি শাহবাগ এবং চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার পূজামণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ডাকে আধা বেলা হরতাল পালিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “সংখ্যালঘু বলতে আমি ধর্মীয় ও জাতীয় সংখ্যালঘুদের বলছি। কারণ রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করতেই সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে সংযোজন করে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিসত্তা বিভাজন করা হয়েছে।
“কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সংখ্যালঘু হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। আমাদের প্রথম এবং প্রধান পরিচয় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এরপরে হচ্ছে আমাদের ধর্মের পরিচয়। এ চেতনা নিয়েই তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি।”
“বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর ও তাদের আশ্বাসে আজ আর আস্থা রাখতে পারছে না।”
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় জয়বাংলা ক্লাব থেকে গিয়ে হামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই জয়বাংলা ক্লাব কারা? যেখানে দুই ভাই সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন, তারা।”
জেএম সেন হলে পূজামণ্ডপে হামলার পর শুরুতে প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ ঘোষণা ও পরে রাতে প্রতিমা বিসর্জন বিষয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “অবস্থান কর্মসূচি, প্রতিমা নিরঞ্জন স্থগিত এবং শনিবার ছয় ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। এরপর পুলিশ কমিশনার আমার সাথে দেখা করেন।
“তিনি নানাভাবে বলার চেষ্টা করেন, প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে যাক। বাকি কর্মসূচিতে তাদের আপত্তি নেই। তখন বলেছি, আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কী? তিনি বলেছেন, নিরাপত্তা দেব। আমি বলেছি, আমরা তো আপনাদের বিশ্বাস করি না।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিন বোধী ভিক্ষু, ঐক্য পরিষদ নেতা রণজিৎ কুমার দে, অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহিলা ঐক্য পরিষদ নেত্রী অধ্যাপক বিজয় লক্ষী দেবী, ন্যাপ নেতা মিটুল দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট শঙ্কর প্রসাদ দে ও রুবেল পাল।
এদিকে জেএম সেন হলে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতাল পালন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
সকাল থেকে নগরীর জামালখান, চেরাগী পাহাড় মোড়, আন্দরকিল্লা, জে এম সেন হল মোড়, লালদীঘির পাড়, কে সি দে রোড, দেওয়ান বাজার এলাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।
হরতালের সময় আন্দরকিল্লা মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
পরে বিকালে বিভিন্ন সনাতন ধর্মীয় সংগঠন এবং মণ্ডপের প্রতিনিধিরা নগরীর জামালখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দরকিল্লা, হাজারী গলিসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বৃষ্টির উপেক্ষা করেই বিক্ষোভকারীরা মিছিলে অংশ নেন।
সমাবেশে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য হামলার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পরিষদের নেতা চন্দন তালুকদার, উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের উত্তম কুমার, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, রত্মাকর দাশ টুনু, শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার মানুষের অংশ গ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আরও পড়ুন-