দুর্গোৎসবে চট্টগ্রাম নগরীতে ২৬০ মণ্ডপ

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এবারের দুর্গোৎসবে ২৬০টি মণ্ডপে প্রতীমা পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2021, 02:37 PM
Updated : 9 Oct 2021, 02:37 PM

শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আসন্ন দুর্গা পূজা আয়োজন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে আয়োজনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নগরীর ১৬টি থানা এলাকায় সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত এবং ঘটপূজাসহ মোট মোট হবে ২৭৬টি। এরমধ্যে ২৬০টি প্রতিমা পূজা। এখন পর্যন্ত সব প্রস্তুতি সন্তোষজনক। প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করছে।

দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা এ যাবৎ বারবার প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল প্রকার বৈষম্য ও ও বিভেদ নীতির চির অবসান হোক-এটাই কামনা।

“একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ঐতিহ্যগত বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। এ বন্ধন প্রকৃতির মতোই সত্য ও শাশ্বত। মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য যে কোনো সময় চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”

হিল্লোল বলেন, “আমরা বিগত দিনে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নিকট আবেদন জানিয়েছিলাম, যাতে সাম্প্রদায়িক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তারপরও আমরা লক্ষ্য করছি দেশের কিছু কিছু স্থানে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে।

“তাছাড়াও বিভিন্ন স্থানে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরসহ ন্যাক্কারজনক ঘটনা এখনও ঘটছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নানাভাবে নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে দেখে আমরা শঙ্কিত। আমরা প্রত্যাশা রাখি বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় এবারের শারদোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ১১টি দাবি তুলে ধরা হয়।

এর মধ্যে আছে- ৭২ এর সংবিধানের আলোকে সকল সম্প্রদায়ের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ-মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা, দুর্গোৎসবকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান এবং শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা, শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন কার্যকর করে অবিলম্বে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেওয়া।

দাবির মধ্যে আরেও আছে- সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ প্রশাসন ও সচিবালয়সহ সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আনুপাতিক হারে নিয়োগ, সরকারি সংস্কৃত কলেজ স্থাপন, বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, সীতাকুণ্ডকে জাতীয় তীর্থস্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সীতাকুণ্ডে ‘চন্দ্রনাথ ধাম’ ও কক্সবাজার ‘আদিনাথ মন্দিরে’ সরকারি সহায়তায় উন্নয়ন করা, দেবোত্তর সম্পত্তি সংক্ষণ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা এবং শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে সরকার-বেসরকারি সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ পাল অরুন, অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, সহ-সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সুমন দেবনাথ, রত্নাকর দাশ টুনু, প্রদীপ শীল, বিপ্লব কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন মল্লিক, সজল দত্ত।