‘যদি হাত ধরা থাকত’… সাদিয়ার নানার আক্ষেপ

রাতে বাড়ি ফিরছিলেন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা দেওয়া চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা সেহেরীন মাহমুদ (সাদিয়া)। হঠাৎ ফুটপাতের পাশে অরক্ষিত গভীর নর্দমার মধ্যে পড়ে যান। সত্তরোর্ধ্ব নানা জামাল আহমেদ সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়েছিলেন কিন্তু বাঁচাতে পারেননি নাতনীকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2021, 02:07 PM
Updated : 28 Sept 2021, 03:23 PM

প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর আবর্জনার স্তুপ সরিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে। এভাবে নাতনীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না জামাল। শুধু আক্ষেপ করছেন, নাতনির হাতটি ধরা থাকলে হয়তো পড়তো না।

হালিশহর বড়পুল এলাকার মইন্যা পাড়ায় তাদের বাড়ি। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় সাদিয়া চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

সাদিয়ার স্বজনরা জানায়, সাদিয়ার বাবা সৌদি আরব প্রবাসী মোহাম্মদ আলী সম্প্রতি দেশে এসেছেন। সোমবার রাতে চশমার দোকান থেকে মামা ও নানার সাথে বাসায় ফিরছিলেন সাদিয়া। পথে শেখ মুজিব সড়ক সংলগ্ন নবী টাওয়ারের পাশে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় গভীর নালায় পড়ে যান।

রাতে সাদিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তার মা শেলী আক্তার। বারবার সাদিয়ার আঁকা বিভিন্ন জিনিসগুলো দেখে কান্না করছিলেন, স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। তাই তার বাবা মা দুজনকেই ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

সাদিয়াদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এক রুমে বসে আছেন সাদিয়ার নানা জামাল আহমেদ, যিনি সাদিয়া নালায় পড়ে যাওয়ার সময় সাথেই ছিলেন। স্বজনরা পাশে বসে তাকে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর রুম থেকে বের হয়ে আসছেন চোখের সামনে মৃত্যু হওয়া নাতনির শোকে কাতর জামাল। আক্ষেপ করতে করতে বলতে লাগলেন, “হাত ধরা থাকলে আমার নাতনি নালায় পড়ত না।”

সাবিহার খালা সাবিহা সুলতানা রোজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় মামার সাথে চশমা কিনতে যাওয়ার বায়না ধরেছিলেন সাদিয়া। মামা প্রথমে নিতে না চাইলেও সাদিয়ার জোরাজুরিতে নিয়ে গেলেন।

আগ্রাবাদ বাদামতলীতে চশমার দোকানে যাওয়ার পর সেখানে আসেন তার নানা। পরে দুজনের সাথে বাসায় ফিরছিলেন সাদিয়া।

জামাল বলেন, “দোকানে অনেক চশমা দেখিয়েছে। কিন্তু একটা চশমাও পছন্দ হয়নি তার। সকালে আবার দোকানে গিয়ে চশমা পছন্দ করার কথা ছিল। তার আগেই আমার নাতনি চলে গেল।”

তিনি বলেন, সাদিয়া পড়ে গেলে সাথে সাথে তিনিও লাফ দেন। তাকে দেখে তার ছেলে জাকিরও (সাদিয়ার মামা) লাফিয়ে নামে।

“যদি হাতে থাকত … পড়ত না।”

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শামীম আহসান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মেয়েটি যে স্থানে পড়ে যায় সেটি অন্তত ১৫ ফুটের মতো গভীর। আর প্রচুর আবর্জনায় ভরা। তিন থেকে চার টনের মতো আবর্জনার স্তুপ সড়িয়ে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, “রাস্তার নিচে বড় ম্যানহোল। সেখানে ঢুকে গেলে তাকে উদ্ধারে বেশি বেগ পেতে হতো। কারণ ওইসব ম্যানহোলে প্রচুর গ্যাস জমা থাকে। সেগুলোতে আমাদের ডুবুরিদেরও আমরা যেতে উৎসাহিত করি না।”

এ মৃত্যুর ঘটনায় সাদিয়ার জ্যাঠা আবু তাহের বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন বলে জানান ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা।