বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণে রেলমন্ত্রীর উদ্যোগ চাইলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী

বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মদানের স্মৃতি বিজড়িত তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব এবং বিপ্লবীদের স্মৃতি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে রেলমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2021, 09:14 AM
Updated : 24 Sept 2021, 09:14 AM

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৯তম আত্মাহুতি দিবসে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

শুক্রবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলিতে সেসময়ের ইউরোপিয়ান ক্লাবের অদূরে প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল।

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পর গুলিতে আহত প্রীতিলতা সায়নাইড পানে আত্মহুতি দেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নওফেল বলেন, “ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ চট্টগ্রামের যে বিপ্লবীরা আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের কথা বিশ্ব মানব ইতিহাসে লেখা থাকবে। উনাদের কথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উনার ‘আত্মজীবনী’তে, ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন। জাতির পিতা সেখান থেকে অনুপ্রেরণা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের শক্তি পেয়েছেন। তিনি সেটা লিখেছেন।

“আমাদের নেতাকর্মীদের বলব, এই স্মৃতি অবশ্যই আমাদের ধরে রাখতে হবে। আগামীতে অপ-রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রীতিলতা ও মাস্টারদার স্মৃতি এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে যারা অংশ নিয়েছেন তাদেরকে আমরা স্মরণ করব। তাদের সম্পর্কে জানব। আগামীতে চট্টগ্রামকে ঘিরে কেউ যদি কোনো অপরাজনীতি করে সেটার বিরুদ্ধে জবাব দিতে, লড়াই-সংগ্রামে আমরা তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিব।”

চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ নওফেল বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে এই বিপ্লবীদের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছে। তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের কাজ সর্বপ্রথম আমাদের দল থেকে করা হয়েছিল। আমাদের সে সময়ের নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক পুলিন দে, আতাউর রহমান খান কায়সার, এম এ মান্নান তারা জে এম সেন হলে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।

“তখন এত নেতাকর্মীর সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ হত না। কিন্তু আমাদের নেতৃবৃন্দ এই বিপ্লবীদের স্মৃতির প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।”

উপস্থিত রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতাদের উদ্দেশে নওফেল বলেন, “আপনাদের প্রতি আবেদন, আপনারা এখানে তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হবেন। রেলওয়ের অনেক জায়গা জমি ব্যবসায়িক স্বার্থে লিজ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

“এদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে করা হয়। রেলমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে বিশেষভাবে আবেদন জানাব, ইতিহাস রক্ষায় রেলের জায়গায় কাজ যেন হয়। তাহলে আমরা চট্টগ্রামবাসী গর্বিত হব। সবাই সাদরে গ্রহণ করব।”

পাহাড়তলিতে সেসময়ের ইউরোপিয়ান ক্লাবটি ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। স্থাপনাটি একসময় ব্যবহৃত হত রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় হিসেবে। দাবির মুখে সেটি সংরক্ষিত স্থান হিসেবে রেখেছে রেলওয়ে। তবে জাদুঘর স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

নওফেল বলেন, “এখানে সংরক্ষণের কাজটা প্রাথমিকভাবে হয়েছে। দাবি তুলবেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব সংরক্ষণের স্থায়ী ব্যবস্থা এবং লাইব্রেরি যাতে করা হয়। আমরা অবশ্যই আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব।”

শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ এবং বীরকন্যা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি এদিন প্রীতিলতার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

নগর যুবলীগ আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি লোকমান হোসেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, বীরকন্যা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মহিম উদ্দিন ও সদস্য সচিব লিটন চৌধুরী রিংকু, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, যুগ্ম সম্পাদক সুজন বর্মন, হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের মায়মুন উদ্দিন মামুন, আনোয়ার পলাশ, এম ইউ সোহেল, বশির উল্লাহ লিটন, মীর মুহাম্মদ রবি, তৌহিদুল হক কায়সার, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের মাহমুদুল করিম, আব্দুল্লাহ আল সাইমুন, মোহাম্মদ হোসাইন চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।