কর্ণফুলীর সাম্পানওয়ালারা ধর্মঘটে

ঘাটের ইজারা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সাম্পান মালিকদের বিরোধে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটের দুটি ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2021, 02:01 PM
Updated : 15 Sept 2021, 02:57 PM

বাংলাবাজার ও ইছানগর ঘাটের সাম্পানওয়ালারা এই ধর্মঘট করছেন গত চার দিন ধরে। এই দুটি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী পারাপার হয়।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে মোট ১৬টি ঘাট আছে, যার আটটি চট্টগ্রাম শহরে।

এগুলো দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারাখানার শ্রমিক ও বিভিন্ন জাহাজ-ট্রলার ও লাইটারেজের নাবিকরা পারাপার করে।

এসব ঘাটগুলো প্রতি বাংলা বছরে ইজারা দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু এবছর নানা জটিলতায় ইজারা দেওয়া হয়নি বাংলাবাজার ঘাট। মূলত এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি।

অন্যান্য ঘাটে যাত্রী পারাপারে ইজারাদাররা এক টাকা করে আদায় করলেও বাংলাবাজার ঘাটে পাঁচ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাম্পান মাঝিদের। 

চট্টগ্রাম ইছানগর-বাংলাবাজার ঘাট সাম্পান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি লোকমান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য ঘাটগুলোতে ইজারাদাররা জনপ্রতি এক টাকা করে আদায় করে। কিন্তু বাংলাবাজার ঘাটে আদায় করা হয় জনপ্রতি পাঁচ টাকা।

সিটি করপোরেশন এবছর ঘাট ইজারা না দিলেও আগের ইজারাদারের লোকজন এ টাকা আদায় করছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আগের ইজারাদার শফিক আহমেদ।

তিনি বলেন, “এবছর আমি টেন্ডারও দাখিল করিনি। গত বছর ইজারা নিয়ে সাম্পান মাঝিদের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তারা টাকা তুলেছিলেন। আমি সেগুলোর খোঁজ রাখি না।”

সিটি করপোরেশনের লোকজন ঘাটের টাকা তুলছে বলে দাবি শফিকের।

সাম্পান মালিকরা জানান, এ ঘাটটি পাঁচ বার ‘রি-টেন্ডার’ হলেও ইজারা দেওয়া হয়নি কম রাজস্বের অজুহাতে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী তিন বার ‘রি-টেন্ডার’ হলে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই ঘাট ইজারা দেওয়া হয়।

জানা যায়, চসিক থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্দে বাংলাবাজার ঘাট ইজারা দেয়া হয়েছিল ৩৭ লাখ টাকায়। আর এবছর ওই ঘাটে সর্বোচ্চ দর ওঠে ২৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যেখানে সাম্পান মালিক সমিতিও অংশ নিয়েছিল।

সাম্পান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি লোকমান বলেন, “আমরা দুই বার সিটি করপোরেশনের সাথে বৈঠকে বসেছি। কিন্তু কোনো সমাধান না আসায় আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছি।”

এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।

বুধবার দুপুরে বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে কোনো সাম্পানের দেখা পাওয়া যায়নি। যাত্রী ছাউনিতে কিছু লোককে বসে দেখা গেছে গল্প করতে। আর টাকা আদায়কারীর টেবিলে বসে দুই যুবককে পত্রিকা পড়তে দেখা গেছে।

তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে মাঝিরা সাম্পান চলাচল বন্ধ রেখেছে। তাই এ ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার হচ্ছে না।

ইজারাদারের লোকদের খবর জানতে চাইলে তারা বলেন, সাম্পান চলাচল না করায় কেউ নেই।

কর্ণফুলীর সদরঘাটে সাম্পানে পারাপার চলছে।

এদিকে ধর্মঘটে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকায় মাঝিরা বিপাকে পড়েছে বলে জানান কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী।

তিনি বলেন, এ ঘাটে মোট ৩১২ জন মাঝি আছে। এখন তারা সবাই বেকার। যাত্রীরা এ ঘাট দিয়ে পার না হয়ে সদরঘাটসহ অন্যান্য ঘাট দিয়ে পার হচ্ছে।

সদরঘাটে গিয়ে কথা হয় মো. ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আমার অফিস বারিক বিল্ডিং এলাকায়। সেখান থেকে বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতাম। এখন ওই ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত রিকশা ভাড়া দিয়ে সদরঘাট এসে পারাপার হতে হচ্ছে।”