পরীর পাহাড়ে নতুন স্থাপনায় ‘প্রধানমন্ত্রীর মানা’

আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের দ্বন্দ্বের মধ্যে পরীর পাহাড়ে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ না করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2021, 03:59 PM
Updated : 14 Sept 2021, 03:59 PM

এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি তাতে সায় দেন।

এরপর রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।

এই ‘অনুশাসন’ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাতেও বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আইন ও বিচার বিভাগকে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে- পরীর পাহাড়ে আর কোনো স্থাপনা যেন না হয় সে বিষয়ে। ১৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলোকে।”

এই নির্দেশের পর পরীর পাহাড়ে চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় থাকা অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, “অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য সিডিএ তালিকা করবে যেহেতু সিডিএ অনুমোদন দেয়। তালিকা করে আমাদের দিবে। আমরা উচ্ছেদ নোটিস সৃজন করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য উদ্যোগ নেব।”

চট্টগ্রামে পরীর পাহাড়ের শীর্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়

চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত পরীর পাহাড়ে বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি সেখানে নতুন দুটি ভবন তৈরির উদ্যোগ নিলে তা নিয়ে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন।

সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ওই প্রস্তাবে হয়, পরীর পাহাড়ে জেলা প্রশাসনের নামে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১.৭২ একর জায়গা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর বলে আসছেন, পরীর পাহাড়ে অনুমোদনহীন প্রায় সাড়ে তিনশ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে।

আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলোর যদি অনুমোদন থাকে, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। যেগুলোর অনুমোদন নেই, সেগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়, “পাহাড় শ্রেণির জমিতে ইতোমধ্যে স্থাপিত সম্পূর্ণ অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল স্থাপনাসমূহ অপসারণ করা এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি যেন আবারও অবৈধভাবে খাস জমি দখল করে কোর্ট বিল্ডিং এর সম্মুখস্থ একমাত্র ফাঁকা জায়গাটিতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

“এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা গ্রহণ পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার বিভাগকে সদয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।”

পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের আরও দুটি ভবন

এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়গুলো আমাদের যেরকম নির্দেশনা দেবে সেভাবে কাজ করব।”

তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিস নিজস্ব একটা সমীক্ষা করেছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরও কাজ করছে। তারা পরিবেশগত সমীক্ষা করছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও কাজ করছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “যেহেতু তারা কী পয়েন্ট ইন্সটেলশন (কেপিআই) স্থাপনা। নীতিমালা অনুসারে ‘ক’ শ্রেণির কেপিআই’র আশেপাশে কোনো ধরনের বহুতল স্থাপনা করা যাবে না। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও কাজ করছে।”

আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য ইতিপূর্বে নির্মিত পাঁচটি ভবনের নিচের অংশে যে পাহাড়ি ঢাল, সেই ঢালের নিচের জমিতে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন অবস্থিত।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়াসা ও পিডিবিকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, পরীর পাহাড়ে সরকারি ভবন ও স্থাপনা ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনায় সংযোগ না দিতে। নতুন সংযোগে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন লাগবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।