চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে, জটলা করছেন অভিভাবকরা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস করেছে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা, তকে স্কুল গেইটে অভিভাবকদের জটলা ভাবাচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2021, 10:32 AM
Updated : 12 Sept 2021, 11:42 AM

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে দীর্ঘ দেড় বছর পর রোববার সকালে খুলেছে স্কুলের ফটক। সকাল থেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলে এসেছে ছাত্রছাত্রীরা।

বহুদিন পর সহপাঠী ও শিক্ষকদের পেয়ে তারা খুব খুশি। স্কুলের বাইরেই হয়ে যায় এক দফা কুশল বিনিময়।

স্কুল গেইটে তাপমাত্রা মেপে আর হাতে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে তারপর যেতে হয়েছে শ্রেণিকক্ষে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের পেয়ে খুশি শিক্ষকরাও।

জামালখানের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাহসিনা হোসেন মাইশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “স্কুলে এসে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু যেভাবে স্কুলে আসতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারছি না। মাস্ক পরতে হচ্ছে বলে বান্ধবীদের মুখটাই দেখা যাচ্ছে না। তবে ক্লাসে ফিরতে পেরে খুব খুশি আমরা।”

শিক্ষার্থীরা খুশি হলেও দুশ্চিন্তা কাটছে না অভিভাবকদের।

এ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা আয়েশা আক্তার বললেন, “অন্যদের না হলেও পঞ্চম শ্রেণির প্রতিদিন ক্লাস হবে। মা হিসেবে তাই একটু ভয় পাচ্ছি। প্রতিদিন আসা-যাওয়া… করোনা এখনো পুরোপুরি চলে যায়নি। ছয় দিনের পরিবর্তে তিন দিন ক্লাস হলে ভালো হয়।

“আবার জেএসসি না হলেও বলা হচ্ছে প্রাথমিক সমাপনী হবে। এটা নিয়ে বাচ্চারাও একটু শঙ্কিত। স্কুল খোলার পর মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যে তারা কীভাবে প্রস্তুতি নেবে।”

এ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. নুরু ছাফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকদিন পর আবার এভাবে পড়ানোর সুযোগ হলো। উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। আশা করি দুয়েক দিনে সবাই নতুন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে।”   

দশম শ্রেণির ছাত্রী ঋশিতা আলম ভাবনা বললো, অনলাইনের চেয়ে ক্লাস রুমেই বেশি সহজ লাগছে তাদের। পুরনো বন্ধুদের পেয়ে ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমিও কেটেছে অনেকটা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় গতবছর মার্চে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সংক্রমণের হার কিছুটা কমায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হল রোববার থেকে। 

তবে শুরুতেই সব শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে শুরু হচ্ছে না। কোন শ্রেণির ক্লাস কবে হবে, তার আলাদা রুটিনও করে দেওয়া হয়েছে।

স্কুল ছুটির পর রওনক জাহান তাসনিম হৃদিতা ও বুশরা আলমরা সবাই সারি বেঁধে দূরত্ব রেখে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে স্কুলের ফটকে পৌঁছায়। কিন্তু গেইটের বাইরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা-মায়েরা।

সকালে স্কুলে শিশুদের পৌঁছে দেওয়ার পরও অনেক অভিভাবককে নগরীর স্কুলগুলোর বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে, যা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষকরা।  

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০ মিনিট পর পর এক এক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু ও শেষ করা হচ্ছে, যাতে ভিড় ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ ও বের হতে পারে। ছাত্রীরাও ক্লাসে নিরাপদ দূরত্বে বসেছে। মাস্ক পড়ে স্যানিটাইজার নিয়েই তারা এসেছে। স্কুল থেকেও দেওয়া হচ্ছে।

“স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের ভিড় না করতে আমরা বারবার বলেছি। এটা একটা সমস্যা।”

ছুটির দেখা যায়, স্কুল গেইটের বাইরে ভিড় করা অভিভাবকদের সরাতে শিক্ষক ও নিরাপত্তাকর্মীরা বারবার তাদের অনুরোধ করছেন।

সকালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে দেখা গেছে।

তবে নগরীর স্কুল পাড়া হিসেবে পরিচিত জামালখান, কলেজ রোড, ওয়াসার মোড়, নিউ মার্কেট মোড়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে ছোট ছোট দলে আড্ডা দিতে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ মাহমুদউল্লাহ মারুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঁচটি স্কুলে আমি গিয়েছি। পরিস্থিতি বেশ ভালো, উৎসবমুখর পরিবেশে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে ফিরেছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক ছিল শতভাগ।

“একটা চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে স্কুলের গেইটে ভিড় করার প্রবণতা। এটা রিকভার করতে হয়ত কয়েকদিন সময় লাগবে। প্রতিদিন মাত্র তিনটা শ্রেণির ক্লাস হবে। তাই আগের মত সব শিক্ষার্থী একই দিনে স্কুলে আসবে না। এটা অভিভাবকরা বুঝতে পারলেই স্কুল গেইটে অত ভিড় হবে না।”

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ‘সন্তোষজনক’। দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ‘ভালো হয়নি’।

“স্কুল গেইটে ভিড় না করতে অভিভাবকদের বুঝিয়ে বলেছি। স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষকেও বলেছি।”