কখন ক্লাসে ফিরবে, সেই উত্তেজনা চট্টগ্রামের অর্চির মনে

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আর তাই চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (বাওয়া) নবম শ্রেণির দিবা শাখার ছাত্রী অনসূয়া অর্চির মনে উত্তেজনা, কখন সে স্কুলে যেতে পারবে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2021, 06:09 PM
Updated : 11 Sept 2021, 08:04 PM

রোববার থেকে ক্লাস শুরুর জন্য চট্টগ্রাম জেলার মোট তিন হাজার ৯৫২টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত হলেও অনসূয়া অর্চিকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন।

অনসূয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় দেড় বছর পর স্কুলে যাচ্ছি। বান্ধবীদের সাথে কথা হয়েছে। বেশিরভাগই ক্লাসে আসতে আগ্রহী। দুয়েকজন আবার অনলাইনে ক্লাস করতে চায়। তবে অনলাইনে উপস্থিতি থাকত কম। ক্লাসরুমের মত হত না। স্কুলে যাব এটা ভাবতে ভালো লাগছে।

“আমাদের ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন- বৃহস্পতিবার। নোটিস দিয়ে জানিয়েছে, মাস্ক ও নিজের পানির বোতল নিয়ে স্কুলে যেতে।”

পরিবারের কোনো সদস্যের জ্বর বা করোনাভাইরাসজনিত উপসর্গ দেখা দিলে তা জানাতে বলেছেন অনসূয়ার শিক্ষকরা এবং সেক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীকে স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র নিবিড় সেনগুপ্ত জানান, তাদের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জোড়-বিজোড় রোল নম্বরের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পৃথক শ্রেণিকক্ষে চলবে তাদের পাঠদান।

নিবিড় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সপ্তাহে বুধবার দুই পিরিয়ড করে ক্লাস হবে। ক্লাস করতে হলে অবশ্যই মাস্ক থাকতে হবে। স্কুলেও ছাত্রদের জন্য মাস্ক এবং স্যানিটাইজার রাখা থাকবে।

“বন্ধুদের সাথে কথা হয়েছে। দেড় বছর পর সবার সাথে ক্লাসে দেখা হবে। সবাই আগ্রহী।”

প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন। স্কুলে আসবে জেনে শিক্ষার্থীরা খুব খুশি। আমরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন তাদের ক্লাসে পাব।

“নির্দেশনামোতাবেক সব ধরনের প্রস্তুতি হয়েছে; পরিচ্ছন্নতায় কিছু সময় লেগেছে। আশা করি, স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করতে পারব।”

স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আয়েশা খাতুন বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপস নেই। স্কুলে নতুন ওয়াশ ব্লক করা হয়েছে। সবার তাপমাত্রা মাপা হবে স্কুলে প্রবেশের আগে। কারো জ্বর হলে স্কুলে আসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছি।”

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদ উল্লাহ বলেন, “নতুন পরিস্থিতির সাথে যাতে শিক্ষার্থীরা খাপ খাইয়ে নিতে পারে সেজন্য সব চেষ্টা থাকবে। নতুন ওয়াশ ব্লক, পানির ব্যবস্থা, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

পরিস্থিতি দেখতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানশনিবার সকালে নগরীর ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুল ও ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবে। শ্রেণি কক্ষগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্কুলের সামনে ওয়াশ ব্লক স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে স্যানিটাইজ করে স্কুলে বা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারে।

“স্কুলের বেঞ্চগুলোতে জীবানুনাশক ছিটানো হয়েছে। প্রত্যেকে মাস্ক পরিধান করবে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা আশা করছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে শিক্ষার্থী ও সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রমটি অব্যাহত রাখতে পারব।”

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নগরীর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখে পাঠদানের উপযোগী মত দিয়েছেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

স্কুল খোলার পর তা মনিটর করা হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক অভিভাবকদের স্কুলের সামনে জটলা না করার আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি নেই। জেলায় ২২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠদানের উপযোগী এখন। করোনার কারণে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ থাকলেও প্রাথমিকের শিক্ষক-কর্মচারীরা স্কুলে এসে আনুষাঙ্গিক কাজগুলো করেছেন।

“এক বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। কোথাও শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকলে দুই শিফটে ক্লাস হবে। আমাদের ৮৯ শতাংশ শিক্ষক ডবল ডোজ টিকা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছে।”

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বোর্ডের অধীনে জেলার ২৮৩টি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির এবং প্রায় ১৪০০ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হবে। প্রস্তুতি সন্তোষজনক।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্কুল-কলেজে খোঁজ নিয়েছি। তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রোববার থেকে তিনটি দল মাঠে থাকবে।”