চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বে টার্মিনাল’ চালু ২০২৪ সালেই: প্রতিমন্ত্রী

২০২৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বে টার্মিনাল’ এর কার্যক্রম পুরোপুরি চালুর লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2021, 06:14 PM
Updated : 19 August 2021, 06:14 PM

বৃহস্পতিবার বে টার্মিনালের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন চট্টগ্রাম এখানে বে টার্মিনালে একটা নতুন পোর্ট হবে, তার মানে এটা হবে। এবং এটার সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ২০২৪ সাল।

“ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুটি সভা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে সর্বশেষ একটি সভা করেছি- পিপিপি, বন্দর ও মন্ত্রণালয়ের সবাইকে নিয়ে। ইতিমধ্যে টাইমলাইন ঠিক করে ফেলেছি।”

তিন ভাগে কাজ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একটি পার্ট চট্টগ্রাম বন্দর করবে। এর বাইরে পিপিপি মডেলে কাজ করার জন্য বিদেশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কথা বলেছে। এই কার্যক্রমও অগ্রসর হচ্ছে।

“সরকারের পক্ষ থেকে যে ৮০৪ একর জমি সেটাও মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। ৬৪ একর জমি (ব্যক্তি মালিকানাধীন) ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করেছি। মাটি ভরাটের কাজ চলছে। কাজ হয়ত স্লো। পিপিপি মডেলের এই অভিজ্ঞতা অতীতে না থাকার কারণে।”

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জমির মালিকদের মামলার বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব সঠিক মালিকানা নিরূপণ করে জমির প্রকৃত মালিক যেন ক্ষতিপূরণের টাকা পায়। জমির মালিক তাদের ন্যায্য পাওনা পাবেন।”

বে টার্মিনাল নির্মাণে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, “অর্থ কোনো সমস্যা না। ফান্ডের সমস্যা হবে না। টাকার কোনো সমস্যা হলে সরকার আছে। চট্টগ্রাম বন্দর তো বাংলাদেশেরই একটা সংস্থা।

“বে টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রামের না বাংলাদেশের গর্ব। পদ্মা সেতু যেমন বাংলাদেশের গর্ব। বে টার্মিনাল হচ্ছে, মাতারবাড়ি হচ্ছে, পায়রা হচ্ছে, মোংলা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। অর্থ কোনো সমস্যা নয়।”

পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলতানা আফরোজ বলেন, “সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ডেনমার্ক, চীনের প্রতিষ্ঠানসহ অনেকেই আগ্রহী।

“কিছু প্রসেস আছে। আমরা সরেজমিন দেখে গেলাম। এটা বিনিয়োগকারীদের সাথে নেগোশিয়েট করতে সহায়তা করবে। দ্রুত প্রসেসগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান ও স্টাডি আপডেট করতে নতুন পরামর্শক নিয়োগ করেছি। নতুন ড্রইং ডিজাইন পেয়ে গেলে ডিপিপি প্রণয়ন করব। এরপর অনুমোদন নিয়ে টেন্ডার প্রসেসে যাব। তারপর দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশাকরি।

“২০২৪ সালের মধ্যে অপারেশনে যেতে চাই। বন্দরের অর্থায়নে টার্মিনালের পাশাপাশি পিপিপি টার্মিনালগুলো একই সময়ে যেন চালু হয় সে লক্ষ্যে কাজ করব।”

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত বে টার্মিনালকে বলা হচ্ছে ‘ভবিষ্যতের চট্টগ্রাম বন্দর’। এজন্য প্রাথমিকভাবে মোট ৮৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারের (রিক্লেইম) পর বে টার্মিনালের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২৫০০ একর। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল এরিয়ার পরিমাণ ৪০০ একর।

নতুন টার্মিনালের প্রস্তাবিত স্থানের পূর্ব পাশে আউটার রিং রোড ও রেল লাইন এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের খেঁজুরতলার বিপরীত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে পলি জমে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চর সৃষ্টি হয়েছে। এই চরেই বে-টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে দিনে-রাতের যে কোনো সময়ে বেশি দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে আসা জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ১৮০০ কন্টেইনার বহন করতে পারে। বে টার্মিনালে ৫০০০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।

প্রস্তাবিত টার্মিনালের জেটিগুলোতে মোট ৩০ লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানো এবং একইসঙ্গে ৩০-৩৫টি জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।

এখানে কয়লা, ক্লিংকার ও জ্বালানি তেল খালাসের জন্য থাকবে আলাদা জেটি।

আরও পড়ুন: