চট্টগ্রামে বাড়ছে কোভিড রোগী, শয্যা বাড়িয়ে সামালের চেষ্টায় হাসপাতালগুলো

করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ মিলিয়ে শয্যা রয়েছে ১৫৮টি, কিন্তু বুধবার দুপুরে সেখানে রোগী ভর্তি ছিল ১৬৫ জন।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2021, 03:51 PM
Updated : 28 July 2021, 03:53 PM

বন্দরনগরীর প্রধান সরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের কোভিড চিকিৎসা সেবায় ‘রেড’ ও ‘ইয়েলো’ জোন মিলিয়ে ৩০০ শয্যায় ২৮৭ জন রোগী থাকলেও ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি ছিল না।

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় চট্টগ্রামের অন্য সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর অবস্থাও এখন এমন।

বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা মিলছে না, সরকারিতে ভর্তি হওয়া গেলেও থাকতে হচ্ছে মেঝেতে। আর আইসিইউর জন্য চলছে হা-পিত্যেস।

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। এই পরিস্থিতি শামাল দিতে শয্যা সংখ্যা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল।

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সঙ্কট দেখা দিলেও চিকিৎসায় কোনো ‘ত্রুটি হবে না’ বলে আশ্বাস দিচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো রোগীকে ফেরত দেওয়া যাবে না। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সুবিধা, হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা রয়েছে। প্রয়োজনে ফ্লোরে হলেও বেড বিছিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।”

আগে উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা না হলেও এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানেও রোগী রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে সিভিল সার্জন জানান।

চট্টগ্রামে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার প্রসঙ্গে ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, “আগে উপজেলা পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষা কম হত, এখন বিভিন্ন উপজেলায় অ্যান্টিজেন টেস্ট বেড়েছে।

“গ্রামের লোকজন জ্বর-সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে কোভিডের পরীক্ষা করায় না। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে আসে। পরীক্ষা করালে এবং অসুস্থ হওয়ার পরপর চিকিৎসা নিলে মৃত্যুর হার কমত।”

তিনি জানান, দেশে কোভিডে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো হলেও চট্টগ্রামে সেই হার এখনও ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রোগীদের ভর্তির জন্য অপেক্ষায় স্বজনরা। ফাইল ছবি

হাসপাতালে ঠাঁই নাই

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বুধবার সকাল পর্যন্ত আইসিউ শয্যায় ১৮ এবং সাধারণ শয্যায় ১৪৭ রোগী ভর্তি ছিল। অথচ এই হাসপাতালের ধারণক্ষমতা সাধারণ শয্যায় ১৪০ এবং আইসিইউতে ১৮টি।

জেনারেল হাসপাতাল পরিচালিত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে (কোভিড ইউনিট-২) ৪০ শয্যার বিপরীতে কোভিড রোগী ভর্তি আছেন ২৫ জন। সেখানকার ছয়টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও সচল আছে দুটি, আর দুটোতেই রোগী ভর্তি রয়েছে।  

চমেক হাসপাতালে রেড জোনে ২২০, ইয়েলো জোনে (কোভিড সাসপেক্টেড) ৮০ এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ইয়োলো জোনে ১১৩ জন এবং রেড জোনে ১৭৪ জন রোগী, ১০ আইসিইউ শয্যাও পরিপূর্ণ বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়।

নগরীর ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) এ সাধারণ শয্যায় ৩৩ জন এবং আইসিইউতে পাঁচটি শয্যার চারটিতে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন।

কোভিড রোগী বাড়ার পর সেখানে বারান্দাসহ অন্যান্য স্থানে বেড বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে সম্প্রতি।

চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে কোভিড জোনে সাধারণে ৭১ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৬৭ জন। ১৩টি আইসিইউ শয্যার সবগুলোই পূর্ণ বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক রঞ্জন দাশগুপ্ত।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কোভিড জোনে ১৬২ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৫৮ জন। ২০ আইসিইউ শয্যার সবই রোগীতে পূর্ণ।

মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ৪০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ৪৫ জন। আইসিইউ শয্যার সবগুলোই রোগীতে ভর্তি।

ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১২ আইসিইউসহ ৭২টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৬৭ জন।

পার্কভিউ হাসপাতালে ৯০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৯৮ জন, ১২ আইসিইউ শয্যার সবকটিতেই রয়েছে রোগী।

শ্বাসকষ্ট ও করোনাভাইরাসের অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আসা এই বৃদ্ধকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হয়। ছবি: সুমন বাবু

শয্যা বাড়িয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা

এই পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হচ্ছে এবং বেসরকারি মেরিনসিটি হাসপাতাল ও ইউএসটিসি হাসপাতালও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার প্রস্তুত।

বিশেষায়িত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার জন্য আরও ১০টি শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।

হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, “হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। সেই চাপ সামলাতেই শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।

“মূলত আইসিইউতে দেওয়ার মতো অপেক্ষমান রোগীদের সুরক্ষা দিতেই এসব বেড করা হচ্ছে। এখানে শুধু হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হবে।”

বেসরকারি মা ও শিশু হাসপতালেও কোভিড জোনে বুধবার থেকে আরও ১০টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান সেখানকার পরিচালক ডা. নুরুল হক।

এদিকে চট্টগ্রামে সংক্রমণ ও আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর দিক থেকে প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। বুধবার একদিনে চট্টগ্রামে নতুন করে ৯১৫ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং মারা গেছে ১৭ জন।

এর আগের দিন মঙ্গলবার চট্টগ্রামে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে রেকর্ড হয়। সেদিন ১ হাজার ৩১০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং ১৮ জনের মৃত্যু ঘটেছিল।

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা মিলিয়ে সংক্রমণ শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৪৩৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৯৩২ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ হাজার ৯৬৪ জন মহানগরী এলাকার এবং বাকি ১৯ হাজার ৪৭২ জন ১৪টি উপজেলার বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে ৫৬১ জন মহানগরীর এবং ৩৭১ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও আমরা বর্তমানে সংক্রমণের চূড়ায় রয়েছি। একটা পর্যায়ে এসে সংক্রমণ চূড়া থেকে নামতে শুরু করবে। এর সাথে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পড়া এবং লকডাউনের সময়ে নিয়ম মেনে চলা দরকার।”