জনপ্রশাসন পদক পাচ্ছে হাটহাজারী ইউএনও কার্যালয়

মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় মডেল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে জনপ্রশাসন পদক ২০২০ এর জন্য জেলা পর্যায়ে সাধারণ (প্রাতিষ্ঠানিক) ক্যাটাগরিতে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছে হাটহাজারীর ইউএনও কার্যালয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2021, 12:25 PM
Updated : 25 July 2021, 12:59 PM

গত বছরের জন্য দেওয়া এই পদক গ্রহণ করতে হাটহাজারীর ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।

২০২০ সালে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ছিলেন মো. রুহুল আমিন। মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় ‘আমার জেলা আমার শহর’ মডেল উদ্যোগ বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় তিনি ইউএনও থাকাকালে। দু’সপ্তাহ আগে তিনি বদলি হয়ে চা বোর্ডের উপ-সচিব পদে যোগ দেন।

শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এক উপ-আনুষ্ঠানিক (ডিও) পত্রে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার বিষয়টি হাটহাজারীর বর্তমান ইউএনওকে জানানো হয়।

আগামী ২৭ জুলাই ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১ একসঙ্গে দেওয়া হবে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হাটহাজারীর পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে মো. শাহিদুল আলমকে (বর্তমান ইউএনও) অনুরোধ জানানো হয়।

জনপ্রশাসন পদক ২০২০ দেয়ার জন্য গত বছরের ২৩ জুলাই সময় নির্ধারণ করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা সম্ভবপর হয়নি। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হলে তাও হয়নি।

২০২০ সালের ওই পদকের জন্য গত বছরের জানুয়ারিতে মনোনয়ন আহ্বান করা হয়।

সেসসময় সাধারণ (পরিবেশ ও আর্থ সামাজিক) ক্ষেত্রে ও দলগত (জাতীয় পর্যায়ে) শ্রেণিতে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করা হয়। তাতে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম দলের সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামের সেসময়ের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, হাটহাজারীর ইউএনও মো. রুহুল আমিন এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নিয়াজ মোর্শেদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল।

২০২০ সালের ১২ মার্চ মনোনয়ন সংক্রান্ত জেলা কমিটি এই প্রকল্পসহ মোট তিনটি প্রকল্প তিনটি পৃথক ক্যাটগরিতে মনোনয়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল।     

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরবর্তী দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে এই মনাই ত্রিপুরা পাড়ার অবস্থান।

এখানকার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের মূল পেশা কৃষি কাজ ও পাহাড়ে কাঠ কাটা। পাড়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ছিল মাটির। এতে বাসিন্দাদের ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে হত।

রুহুল আমিন হাটহাজারীর ইউএনও পদে থাকাকালে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাড়াটির উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। মনাই ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে দুই কিলোমিটার রাস্তা, সৌর বিদ্যুৎ, পল্লী বিদ্যুৎ, বিদ্যালয়, টিউবওয়েল, শৌচাগার স্থাপন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, খেলার উপকরণ ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান, মন্দির নির্মাণ, মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, পূজায় সরকারি বরাদ্দ এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মনাই ত্রিপুরা পাড়ার শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাবৃত্তি’ পায় ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা শীর্ষক কর্মসূচি’র আওতায় সেখানে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে ১২টি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ (সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন) প্রকল্পের আওতায় এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।

দায়িত্ব পালনের শেষ দিনে ১১ জুলাইও মনাই এবং সংলগ্ন সোনাই ত্রিপুরা পাড়ার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ১৫১ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তির টাকা বিতরণ করেন ইউএনও মো. রুহুল আমিন।

পদক বিষয়ে হাটহাজারীর ইউএনও মো. শাহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত আগের ইউএনও রুহুল আমিন স্যারের যে কাজ মনাই ত্রিপুরা পাড়া নিয়ে, সেটার জন্য এই পদক দেওয়া হয়েছে। যেহেতু কিছুদিন আগে তিনি বদলি হয়ে গেছেন তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে আমাকে মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়েছে।

“এটি প্রতিষ্ঠানিক পদক হিসেবে হা্টহাজারী নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়কে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমার কাছে চিঠি এসেছে।”