তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু সংলগ্ন মইজ্জ্যার টেক গরুর বাজারে আসা এই বেপারী তাই চিন্তার মধ্যেই পড়েছেন। মনে মনে বছরজুড়ে লালনপালনের ব্যয় আর শ্রমের হিসাব করেও কূল কিনারা করতে পারছেন না কি করবেন এখন।
মঙ্গলবার নগরীর অপরপ্রান্তে বিবিরহাট গরুর বাজারের চিত্রও কাছাকাছি। এক বিক্রেতা বলেন, “এক লাখ ৪০ হাজার টাকার গরুর দাম কইতেছে ৮০ হাজার। ওই দামে বেচলে খরচও উঠবে না। বিকালে যদি বিক্রি হয় সে আশায় আছি।“
বিবিরহাট থেকে রোববার ৮৪ হাজার টাকা দেশি জাতের গরু কেনেন খুলশীর বাসিন্দা রাশেদ চৌধুরী। তার মতে, গরুর দাম এবার তুলনামূলক কম। অন্যবার হলে এটি লাখ টাকার উপরে কিনতে হত।
মঙ্গলবার হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগের দিন বন্দরনগরীর হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা বেশি। সকাল থেকেই ক্রেতা কম বলে দামও পড়তির দিকে। এতে ক্রেতারা খুশি হলেও উৎকণ্ঠা বাড়ছে বেপারীদের।
সময় যত কমে আসছে খরচ তোলা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দরদাম করে যাচ্ছেন তাদের কেউ কেউ। সামান্য লাভে কিংবা গায়ে গায়ে থাকলেও অনেকে গরু ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানালেন এই প্রতিবেদককে।
তবে হাট বসরা আগেই স্থায়ী ও অস্থায়ী খামারিদের মধ্যে যারা অনলাইনে গরু বিক্রি করেছেন তাদের অবস্থা ভালো।
চট্টগ্রাম জেলায় এবার ১ লাখ ২০ হাজার গরু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে, যা মোট চাহিদার ১৫ শতাংশের মত। এর প্রভাব পড়েছে হাটগুলোতে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চলমান মহামারীতে হাট বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ভিড় এড়াতে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনায় ক্রেতারা আগ্রহী ছিলেন অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি।
পাশাপাশি মহামারীর ধাক্কায় ক্রেতার পকেটে টান পড়ায় এবার বন্দরনগরীতে কোরবানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হতে পারে বলে ধারণা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের।
নগরীতে এবার তিনটি স্থায়ী হাট- সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তাপাড়ের হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী ভিত্তিতে নূর নগর হাউজিং কর্ণফুলী, সল্টগোলা রেলক্রসিং এবং পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে হাট বসেছে।
নগরীর উত্তর কাট্টলীর সিটি এগ্রোর অংশীদার এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৫৩টি গরু ছিল আমাদের। ৯৯ শতাংশ গরুই অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন করপোরেট অফিসের লোকজন এবং ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ গরু কিনেছেন। ক্রেতার ঠিকানায় সব গরু পৌঁছেও দিয়েছি।“
অনলাইনে সব ধরনের গরুর ক্রেতাই পেয়েছেন বলে জানালেন সিএন্ডবি এলাকার সারা এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলিফ চৌধুরী।
তাদের খামারে এবার কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৪২০টি গরু ছিল। যার মধ্যে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় গরু বিক্রি হয়েছে। দেশি জাতের গরুর ক্রেতাই ছিল বেশি।
আলিফ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বিক্রি শেষ। বেশিরভাগই অনলাইনে কিনেছেন। কিছু ক্রেতা খামারে এসেছেন। গরু নিয়ে হাটে যেতে হয়নি।“
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষ তিনদিনে বিক্রি কমে আসে। এখন পর্যন্ত জেলায় অনলাইনে মোট বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০টি গরু। আগামী বছর হয়ত চাহিদার অর্ধেক অনলাইনেই বিক্রি হবে।”
চট্টগ্রাম বিভাগে এবার মোট এক লাখ ৫৪ হাজার কোরবানির পশু বিক্রির তথ্য জানিয়ে বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পরিচালক আশরাফুল আলম খান বলেন, “দেশের মধ্যে বিভাগ হিসেবে তা সর্বোচ্চ। বিভাগে ২০ হাজারের মত খামারি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গরু বিক্রি করেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ। এর বিপরীতে যোগান ৩০ লাখের মত বলে জানান তিনি।
নগরীর এক কিলোমিটার নূর নগর হাউজিং ইলিয়াস ব্রাদার্স মাঠের গরুর বাজারের ইজারাদার মো. সাইফুল আলম বলেন, “হাটে গরু আসছে বেশি। ক্রেতারা কম দামে কিনতে চাইছেন। বিক্রেতারা পোষাচ্ছে না বলে ছাড়ছে না। তাই এখনও বিক্রি জমেনি। বিকেলে বা রাতে বিক্রি হবে আশা করি।
“এবার পাড়ায় পাড়ায় গরু বিক্রি হয়েছে। তাই হাটে ক্রেতা কম। ইজারার টাকা উঠবে না।”
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছর চট্টগ্রাম জেলায় গত ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি পশু কোরবানি হয়। প্রতি বছর আগের বছরের তুলনায় সাধারণত ৫-৬ শতাংশ বেশি কোরবানি হয়।
চলতি বছর জেলায় ৮ লাখ ৯ হাজার কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, এর মধ্যে জেলায় কোরবানির পশু আছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার।
জেলায় ৪৭০০ স্থায়ী গরুর খামারের পাশাপাশি মৌসুমি খামারি আছেন আরও ১৩ হাজার।
আরও পড়ুন-