সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধে মামলা, সমন জারির নির্দেশ

সিআরবিতে হাসপাতাল বা কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলা গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিবাদিদেরকে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2021, 02:31 PM
Updated : 19 July 2021, 02:52 PM

চট্টগ্রামের প্রথম জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ রুবায়েত ফেরদৌসের ভার্চুয়াল আদালতে সোমবার আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলুর করা মামলাটি গ্রহণ করে এ আদেশ দেয়।

দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১ আদেশের ৮ রুল অনুসারে প্রতিনিধিত্বমূলক (রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যুট) ঘোষণার মামলাটিতে ১৬ জনকে বিবাদি করা হয়।

মামলার বাদি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী হিসেবে কর্মরত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মু্ক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এবং প্রাকৃতিক লীলাভূমি সিআরবিতে কেউ যাতে কোনো হাসপাতাল বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য ডিক্রি চেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক ঘোষণার মামলাটি করা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে বিবাদিদের সমন জারির আদেশ দিয়েছেন।”

মামলার বিবাদিরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব, চট্টগ্রাম ওয়াসার সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সচিব, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, স্টেট অফিসার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনার।

ঈদের বন্ধের পর এবিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় তাই কেউ এ মামলায় অংশভুক্ত হতে চাইলে যাতে অংশ নিতে পারেন সে লক্ষ্যে।”

মামলার নথিতে বলা হয়, শিরীষতলা সংলগ্ন গোলায়পাড়ায় আবদুর রব কলোনি নামক যে জায়গা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেখানে শায়িত আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের জিএস বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রব। এমন একজন বীর সেনানীর কবর গুঁড়িয়ে দিয়ে যে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এই স্থাপনা নির্মাণের সাথে জড়িত তারা দেশদ্রোহী বৈ আর কিছু নয়।

“ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সমগ্র জনসাধারণ যখন তীব্র প্রতিবাদমুখর তখনিই বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকৃতি ধ্বংসের সত্যতা স্বীকার করে কিন্তু ধ্বংসলীলা বন্ধের কোনো বিজ্ঞপ্তি অদ্যাবধি প্রচার করেনি।”

এই মামলায় আদালতের কাছে বাদি তিনটি প্রার্থনা করেন।

প্রথমত: সিআরবিতে প্রকৃতিবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যাতে কোনো হাসপাতাল বা স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সে মর্মে ডিক্রির ঘোষণা।

দ্বিতীয়ত ২ থেকে ১৬ পর্যন্ত বিবাদিরা (প্রথম বিবাদি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব) সিআরবিতে স্থাপনা নির্মাণে কোনো ধরণের সহযোগিতা যাতে না করে সে জন্য বারণ করা এবং বাদী প্রতিকার পেতে পারে এই লক্ষ্যে আদালত আর যা আদেশ দিতে পারেন তা।

গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর (সিআরবি) এলাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের (পিপিপি) আওতায় হাসপাতাল নির্মাণে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তি করে রেলওয়ে।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার উচ্ছেদের কাজ শুরু হলে শ্রমিক কর্মচারী এর প্রতিবাদ করেন। পরে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকরা হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবি করে বিবৃতি দেন। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়।

এরপর চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ব্রিটিশি বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি বিজড়িত এবং শহীদদের কবর ও শহীদ মিনার থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত সাংস্কৃতি কেন্দ্র সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ না করতে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে।