চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশের টানা অভিযানে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর ও শুক্রবার রাতে কানাইঘাট এলাকা থেকে এসব সুপারি উদ্ধার হয়েছে।
এসময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাবা ও ছেলেসহ ৩ জনকে। এরা হলেন- ফয়সাল আহম্মেদ (২৭), আজিজুল হক (৫২) ও তার ছেলে লোকমান হোসেন টুটুল (২৩)।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যার সঙ্গে জড়িত আছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালক, মালিক ও ভাড়ার মধ্যস্ততাকারীরা।
তিনি বলেন, “তারা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ বন্দর এলাকা থেকে পরিবহন করা ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল ভাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়।
“পরে মালামাল বহনকারী ট্রাকটি কোনো স্থানে ফেলে দেয়। মূলত যেসব পণ্য বিক্রি করে ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানের দামের চেয়েও বেশি লাভ হবে সে ধরনের মালামাল নেওয়ার টার্গেট করে।”
এই চক্রটি সুপারির চালানটি ‘আত্মসাৎ’ করে সিলেটের কুলাউড়ায় ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “অভিযানে মোট ৫০ লাখ টাকার সুপারি উদ্ধার করা হয়েছে যা ওই ট্রাকের দামের চেয়ে বেশি।”
“কিন্তু পরদিন রাত পর্যন্ত ট্রাকটি না পৌঁছানোয় ট্রাক ভাড়ার মধ্যস্ততাকারীকে ফোন করেন ওহাব। এসময় তার ফোন বন্ধ পেয়ে নানাভাবে খোঁজ নিয়ে সিলেটের কুলাউড়া উপজেলায় ট্রাকটির সন্ধান পেলেও সুপারি পাননি।”
এ ঘটনায় গত ১১ জুলাই কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেন ওহাব। মামলায় ট্রাকের মালিক শেবলু মিয়া (৪৫), মধ্যস্ততাকারী ভুটু মানিক (২৮) ও চালক মো. জাহাঙ্গীরকে (৩৮) আসামি করা হয়।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ভুটু মিয়া সুপারিগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে না নিয়ে ট্রাক মালিক শেবলু ও চালক জাহাঙ্গীরের প্ররোচনায় বিক্রি করে দিয়েছে।
পরে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা ফয়সাল, আজিজুল ও লোকমানের কাছ থেকে ১৬২ বস্তা সুপারি উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানা যায় কানাইঘাট উপজেলা সদর ইউনিয়নে শাহীন ও শামছুল নামে দুই ব্যক্তির ভাড়া করা গুদামে বাকি সুপারিগুলো আছে। পরে সেখান থেকে আরও ২০টি বস্তা উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সিদ্দিক, শামছুল, শাহীন ও দুলাল নামে আরও চারজনের বিষয়ে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বলেন, “তারা এধরনের চোরাই মালামাল কিনে নিজেরা রাখেন। পরে সেগুলো চোরাই পথে ভারতে পাচার করে দেন।”
এ ঘটনায় এজাহারে নাম থাকা ট্রাকের মালিক, চালক ও মধ্যস্থাতাকারীসহ তিন আসামি এবং তদন্তে নাম আসা চারজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে, আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে পরবর্তীতে রিমান্ড শুনানির দিন ঠিক করবেন বলে জানান ওসি।