এমনকি টিকা গ্রহণের পর আক্রান্ত হলেও রোগীদের গুরুতর শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়নি কিংবা আইসিইউতে নেওয়ার মত জটিলতা দেখা দেয়নি বলে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়- সিভাসু এর এক গবেষণায় দেখা গেছে।
অন্যদিকে টিকার দুই ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে নমুনা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দশমিক ৪৯ শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলের ১২ হাজার ৯৩৬ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার ওপর এই গবেষণা চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণার তথ্য প্রকাশ করে।
গবেষণা দলের নেতৃত্বদানকারী সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, “অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা গ্রহণকারীদের নিয়ে এই গবেষণায় দেখা গেছে তাদের আবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার নিন্মমুখী ও মৃত্যুঝুঁকিও কম।
“দেশের সকল জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রাথমিকভাবে টিকা কর্মসূচীর আওতায় আনা গেলে এই রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।
এই বিষয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. আবদুর রব বলেন, “টিকা নেওয়া রোগী আমরা পেয়েছি। তবে তাদের স্বাস্থ্যসমস্যা তুলনামূলক কম।
“এই ধরনের গবেষণা বেশি হলে ভালো। তাতে টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বাড়বে।“
সিভাসু ও চাঁদপুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে গত ২২ এপ্রিল থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৩৬ ব্যক্তির করা নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ১৩৭ জনের (১৬.৫ শতাংশ) সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
এর মধ্যে মোট এক হাজার ৯৫ জনের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট তথ্য গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষণা দেখা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে ৯৬৮ জন টিকার কোনো ডোজ নেননি।
অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ এর নেতৃত্বে সিভাসুর শিক্ষক অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী, চিকিৎসক মোহাম্মদ খালেদ মোশাররফ হোসেন, ইফতেখার আহমেদ, ত্রিদীপ দাশ, প্রনেশ দত্ত, মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর আহমদ নিজামী এই গবেষণা কাজে অংশ নেন।
সিভাসুর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রথম ডোজের পর যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকা নিয়ে আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।
এরপর দ্বিতীয় ডোজের পর আক্রান্তদের ওপর তুলনামূলক এই বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায় টিকা নিলে করোনাভাইরাস মোকাবিলা সহজ হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১৩৭ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়।
অথচ প্রথম ডোজ নেওয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ জন এবং দুই ডোজের পর আক্রান্ত ৩ জনকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি টিকা না নেওয়া ৮৩ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। এর মধ্যে ৭৯ জনের অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৭০ শতাংশ পাওয়া যায়।
“অপরদিকে টিকা নেওয়া রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক (৯৬.৭%) পাওয়া যায়।’’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “টিকা না নেওয়া সাত জনের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়। অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি।
“টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সময়কাল সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।শেষ পর্যন্ত ১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যারা টিকা গ্রহণ করেননি।“
গবেষণায় আরও দেখা যায়, আগে থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় (কো-মরবিডিটি) ভুগছিলেন এবং টিকা নেননি এমন রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
টিকা গ্রহণকারী কো-মরবিডিটিতে ভোগাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ছিল ১২ শতাংশ।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকরা মনে করছেন বড় জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার প্রকোপ এবং তীব্রতা কমে আসবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন