জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ভুল হলে সংশোধন কঠিন হবে: মন্ত্রী

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর কোনো কাজে ভুল থাকলে সংশোধন করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2021, 06:21 PM
Updated : 25 June 2021, 06:21 PM

শুক্রবার বিকেলে নগরীর চাক্তাই খাল এলাকা পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের নকশা, গুণগত মান ও সমন্বয় নিয়ে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভায় বসবেন স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

জলাবদ্ধতা দূর করতে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) একটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প রয়েছে।

এসব প্রকল্প নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, “সমন্বয়হীনতা আমার মনে হয় না, যদি থাকেও সেটাকে দূর করতে হবে। সমন্বয়হীনতা আছে এ কথাটা আমার কাছে খুব পরিলক্ষিত না, গুরুত্বপূর্ণ না।

“… এগুলো বড় কিছু না। যদি থাকে নিরসন করা যাবে। কিন্তু কাজ যদি একটা ভুল হয় সংশোধন করাটা কঠিন হবে।”

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার অনেকগুলো কারণ আছে মন্তব্য করে তাজুল ইসলাম বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হয় এবং নকশা ও গুণগত মান ঠিক থাকে, তা তিনি দেখবেন।

তিনি জানান, শনিবারের সভায় সব পক্ষ নিজেদের প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরবে। সেখানে দেখা হবে যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে এবং যে কাজগুলো হচ্ছে, যেসব পদ্ধতিতে হচ্ছে সেভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে কিনা।

চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। তিন বছর আগে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

পাশাপাশি সিডিএ’র কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু পর্যন্ত সড়ক এবং বেড়িবাঁধ প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার। এর আওতায় খালের মুখে ৩২টি রেগুলেটর, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে ফ্লাড ওয়াল ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কথা আছে।

অন্যদিকে নগরীর বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার একটি খাল খননে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি)। যার অগ্রগতি জমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে।

সিডিএ’র অধীনে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, “কাজ শেষ না হলে আপনারা সুফল পাবেন কী করে?... জলাবদ্ধতা যে কারণে হচ্ছে সেগুলো নিরসনকল্পে যদি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তাহলে সুফল পাবেন। শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুটা সমস্যা আপনাদের মোকাবেলা করতে হবে।”

মাঝারি বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার বিষয়টি তোলা হলে তিনি বলেন, “কী কারণে হচ্ছে- প্রকল্পের কোনো ত্রুটি আছে কিনা? অথবা প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে বা প্রকল্প নির্মাণাধীন থাকার কারণে, এগুলো পরিদর্শনে এসেছি।”

গত কয়েক মাস ধরে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের আওতায় খালে নির্মাণ কাজের জন্য দেওয়া বাঁধ অপসরারণের দাবি জানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবারও তিনি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বাঁধ অপসারণ না হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “নির্মাণকালীন কখনো কখনো বাঁধ দেওয়া থাকলে নির্মাণ কাজ যখন শেষ হয় তখন বাঁধ অপসারণ অটোমেটিক্যালি হয়ে যাবে, তখন আর সমস্যা থাকবে না।”

বাড়ইপাড়া খাল খনন প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের যদি সুনির্দিষ্ট কোনো খাল খননে প্রয়োজনীয়তা থাকে তাহলে তারা সেটা উপস্থাপন করলে অবশ্যই মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী উনার যথাযোগ্য অবদান রাখবেন।

“আগামীকাল পর্যালোচনা সাপেক্ষে যদি কোথাও কাজের কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে, দীর্ঘসূত্রতা থাকে, সময়ক্ষেপণ হয় তাহলে সেগুলো না করার জন্য নির্দেশনা দেব।”

শুক্রবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চাক্তাই খালের পুরনো ব্রিজ ও স্লুইস গেট পরিদর্শনে গিয়ে খালের মুখের সংকীর্ণতা দেখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রী তাজুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “এতে জলাবদ্ধাতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশংকা আছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে খালের মুখের প্রশস্ততা বাড়াতে হবে।”

সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের লে. কর্নেল শাহ্ আলী, সিসিসি’র কাউন্সিলল মো. মোরশেদ আলম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন এ সময় সঙ্গে ছিলেন।