ডবলমুরিং থানার বাদমতলী এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে এই তিনজনসহ মোট চার জনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
ছিনতাইয়ের অভিযোগে প্রথমে আকাশ (২৪) নামে ঝাড়ুদারকে এবং পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশের কথিত সোর্স আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (৪৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও আকাশের স্ত্রী তানিয়া বেগমকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আকাশ জ্যামে দাঁড়ানো সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে টার্গেট করে পেছনে উঠে ত্রিপল কেটে যাত্রীর ব্যাগ কিংবা মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয়।
“২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সে ছিনতাই করে পালিয়ে যেতে পারে। এসময় যাত্রী টের পেয়ে গেলে তাকে ছুরিকাঘাতের ভয় দেখায়।”
পাশাপাশি সন্ধ্যার পর গার্মেন্টস ছুটির সময় নারী এবং বাস, ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের চালক, হেলপার কিংবা জানালার পাশে বসা যাত্রীদের টার্গেট করেও আকাশ ছিনতাই করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওসি মহসিন বলেন, তিন বছরে আকাশ অন্তত দুই শতাধিক ছিনতাই করেছে। ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত তার এলাকা। আকাশের দাবি সে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্থায়ী ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করে। তবে সেটির বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে।
আকাশের ছিনতাইয়ের কৌশল বর্ণনা করে তিনি বলেন, “বন্দর এলাকায় চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানকে সংকেত দিয়ে চাকায় লোহার পাত ঢুকেছে কিংবা হাওয়া বের হচ্ছে বলে চালককে সতর্ক করে আকাশ। চালক কিংবা হেলপার গাড়ি থেকে নামলে তাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
“আবার জ্যামে আটকে থাকা বাস টার্গেট করে জানালার পাশে বসা যাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দৌঁড় দেয়। তার চাহিদামত আয় হলে সে কয়েকদিন বসে থাকে। আবার চাহিদামত আয় না হলে দিনের মধ্যে একাধিক ছিনতাই করে সে।”
প্রধান টার্গেট মোবাইল
ওসি মহসিন জানান, আকাশের প্রধান টার্গেট থাকে মোবাইল ফোন সেট। মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নিতে পারলে সেগুলো সে বিক্রি করে ফেলে। ছিনতাই করা অনেক দামি মোবাইল ফোনও সে অল্প দামে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল।
আকাশ আরও জানায়, মাস কয়েক আগে সে একটি ব্যাগ ছিনতাই করে সেখানে কিছু হীরার টুকরো পায়। যদিও সে সেগুলো পাথর ভেবে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে আনোয়ার ও তাজুলকে ফেলে দেয়ার বিষয়টি জানানোর পর তাদের পরামর্শে আবার গিয়ে ব্যাগটি কুড়িয়ে আনে। পরে সেগুলোর মধ্যে তিনটি করে হীরার টুকরো আকাশ ও তাজুল নিয়ে ফেলে এবং দুইটি আকাশকে দেয়।
পুলিশ সেই আট টুকরো হীরা উদ্ধার করেছে বলেও জানান ওসি মহসিন।
‘ভাগ নেয় পুলিশের কথিত সোর্স’
ওসি মহসিন জানান, গ্রেপ্তার আনোয়ার ও তাজুল নিজেদের পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন। আর আকাশ যা ছিনতাই করবে সেগুলোর ভাগ দিতে হয় তাদের। ছিনতাই করা মালামাল চার ভাগের তিন ভাগ দিয়ে দিতে হয় এ দুই জনকে। আর এক ভাগ পায় আকাশ। এ দুই জনের কাছ থেকেও হীরাসহ কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
‘গ্রেপ্তার হলে জামিন করান স্ত্রী’
বিভিন্ন সময়ে আকাশ তিন বার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। প্রতিবারেই জামিনে ছাড়া পেয়ে এসে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
ওসি জানান, আকাশের ছিনতাইয়ের আদ্যপান্ত তার স্ত্রী তানিয়া জানে। তানিয়া সবকিছু জেনেই বয়সে ছোট আকাশকে বিয়ে করেছে। আকাশ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করার পর কিছু অংশ আনোয়ার ও তাজুলকে দিয়ে বাকিগুলো তানিয়ার কাছে এনে জমা রাখে।
আকাশ পুলিশকে জানায়, সে যতবার গ্রেপ্তার হয়েছে প্রতিবারই তাকে জামিন পেতে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করেছেন তানিয়া। আইনজীবী ঠিক করা থেকে শুরু করে আকাশের জামিনের সবকাজ তানিয়া করেন।