কবরস্থান নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে কবরস্থানের জায়গা নিয়ে সংঘর্ষের ‘মূল হোতা’ এয়াকুবসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; উদ্ধার করা হয়েছে সংঘর্ষে ব্যবহৃত পিস্তল, গুলি ও ধারালো অস্ত্র।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2021, 10:04 AM
Updated : 25 June 2021, 10:04 AM

চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ ও ঢাকার পল্টন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

এয়াকুব ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য দুই জন হলেন- ওসমান আলী (৩৫) ও মাসুদ আলম (৩৬)।  

এয়াকুবকে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থেকে ও অন্য দুই জনকে ঢাকার পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক।

এ নিয়ে এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত নয় জনসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ১১ জুন পূর্ব বাকলিয়া আবদুল লতিফ হাটখোলা এলাকায় বড় মৌলভি কবরস্থানে সাইনবোর্ড দেওয়া নিয়ে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে চার জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়।

পুলিশের উপ-কমিশনার বিজয় বসাক শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনার পর থেকে হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসছিল। বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিরসরাই উপজেলার জোরাগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এয়াকুবকে (৫০) গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশের একটি দল।

“অপর একটি দল ঢাকার পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওসমান ও মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়ে গভীর রাতে আব্দুল লতিফ হাটখোলা চাঁন্দগাজী সড়কের খাল পাড় থেকে দুইটি গুলি ও ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও দুইটি কিরিচ উদ্ধার করা হয়।”

বিজয় বসাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বড় মৌলভী কবরস্থানটি এক সময় পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসলেও সেটি বর্তমানে স্থানীয়দেরও দাফনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল সে জায়গার মালিকরা।

কিন্তু কিছুদিন ধরে সেখানে দাফনের বিনিময়ে টাকা আদায় করছিলেন এয়াকুব ও তার সহযোগীরা। কবরস্থানে ‘দাফন করতে টাকা না দেওয়ার’ কথা উল্লেখ করে ১১ জুন সেখানে জায়গার মালিক সাইফুল্লাহ মাহমুদ সাইনবোর্ড লাগাতে যান। এ নিয়েই মূলত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।   

বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, কবরস্থানের জায়গাটি সাইফুল্লাহ মাহমুদের পূর্ব পুরুষেরা দান করেছিলেন। যেখানে স্থানীয় লোকজনের মৃত্যুর পর দাফন করা হয়। এয়াকুব আলীর মামাকে সেটি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জায়গার মালিকরা।

“সে হিসেবে এয়াকুব কবরস্থানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় ছিল দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি সেখানে দাফনের জন্য টাকা আদায় করা হত বলে অভিযোগ আছে।”

ঘটনার দিন সকালে সাইফুল্লাহ মাহমুদ কবরস্থানে পরিচালনা কমিটির লোকজন নিয়ে সেখানে সাইনবোর্ড লাগাতে যান। এসময় এয়াকুব আলী লোকজন নিয়ে তাদের ওপর হামলা ও গুলি চালান।

ওসি রুহুল আমিন জানান, হামলার ঘটনায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ বাদী হয়ে এয়াকুবকে প্রধান আসামি করে ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

ওই দিন সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে গুলি করা, মহড়া দেওয়া এবং হামলার বিষয়টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও দেখা যায়।

ওসি রুহুল আমিন জানান, হামলার সময় মহিউদ্দিন, ওয়াসিম ও জাহেদ নামে তিনজনকে গুলি করতে দেখা যায়। ফুটেজ দেখে গত ১৬ জুন ভোর রাতে জাহিদকে বাঁশখালীর প্রেম বাজার থেকে পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় ব্যবহৃত আরেকটি পিস্তল বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার করা হয়। যেটি গ্রেপ্তার ওসমানের বলে জানান ওসি রুহুল আমিন।

তবে ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারী মহিউদ্দিন এবং ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এদিকে গত ২২ জুন বাকলিয়া এলাকায় এ কবরস্থানটি পরিদর্শনে যান শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেখানে তিনি কবরস্থান নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দমনের নির্দেশনা দেন।