হেফাজতকে ঠেকাতে সাংগঠনিক ভিত শক্ত করার সিদ্ধান্ত আ. লীগের

হেফাজতে ইসলামকে ঠেকাতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2021, 05:56 PM
Updated : 19 June 2021, 05:56 PM

মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর চলাকালে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রভূমি হাটহাজারী মাদ্রাসা ঘিরে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে চারজন প্রাণ হারায়। মূল সড়ক বন্ধ করে কয়েকদিন অবস্থান নেয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

এর প্রায় তিন মাস পর শনিবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ নেতারা। রাত সাড়ে নয়টার দিকে সভা শেষ হয়।

সভায় উপস্থিত চট্টগ্রামের এক নেতা পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাটহাজারীতে হেফাজতের উৎপাতের কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্থানীয়ভাবে অনৈক্য মিটিয়ে সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনকে গুছিয়ে নিতে জোর দেওয়া হয়েছে।

“থানা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর মধ্যে কিছু অনেক পুরনো। সেগুলো দ্রুত পুনর্গঠন করতে বলেছেন। হাটহাজারীতে দলীয় নেতাদের মধ্যে যে বিরোধ-দূরত্ব আছে তা মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।”

হাটহাজারী ও পাশের উপজেলা ফটিকছড়িতে গত কয়েক মেয়াদে দলীয় সাংসদের পরিবর্তে জোটের শরিক দলের নেতারা সাংসদ হওয়া নিয়েও নিজেদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন স্থানীয় নেতারা। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দলীয় নেতামন্ত্রীদের হাটাহাজারী মাদ্রাসায় যাওয়া, সেখানে হেফাজত নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ ও হেফাজত নেতাদের প্রশংসা করা এসব নিয়েও সমালোচনা করেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা।

সভার বিষয়ে রাতে টেলিফোনে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংগঠনকে শক্তিশালী করতে, কিছু সমস্যা আছে তা জেনে সমাধানের লক্ষ্যে বসেছিলাম। ওইখানে (হাটহাজারীতে) দীর্ঘদিন ধরে দলীয় এমপি নেই। জোটের এমপি। এটা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও মনকষ্ট আছে। এটা তারা বলেছেন।

“হেফাজতের কিছু হিংস্রতা নিয়ে তারা কথা বলেছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। আলোচনা করে সেই দূরত্ব কমাতে চেষ্টা করেছি। ওখানে ১৪টা ইউনিয়নের মধ্যে নয়টাতে সম্মেলন হয়েছে। ছয়টাতে হয়নি। টার্গেট সম্মেলনগুলো দ্রুত করা। উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ২০দিনের মধ্যে করা। ত্যাগী নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করা। জনসম্পৃক্তদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা।”

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই সমস্যা সমাধানে হাটহাজারী যাবে এবং যুবলীগের তৃণমূল সম্মেলন করতে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন।

উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, “সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ছোটখাটো ভুল বুঝাবুঝি নিরসন করতে বলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাটহাজারী যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

“থানা কমিটি একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলো সম্মেলন করে যাতে ঐক্যবদ্ধ কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।”

উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম বলেন, “হাটহাজারীতে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে যা কিছু করণীয় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল থেকে যেন সংগঠন সুগঠিত হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।”

সভায় অংশ নেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। এছাড়া হাটহাজারী উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দও ছিলেন।