সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এ অভিযান চলে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের করা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা ধরে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
অভিযানে গিয়ে উচ্ছেদকারী পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে কাঁচা, টিনশেড ও সেমিপাকা স্থাপনা দেখতে পান। পাহাড়ের পাদদেশের পাশাপাশি উপরের দিকেও এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
এছাড়া পাহাড়ের ভিতর দিয়ে বহমান খালকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা এবং পাহাড়ি ছড়ার মাঝখানে দেয়াল দেয়ার ঘটনাও দেখতে পান।
বায়েজিদ লিংক রোডের নগরীর অংশে অভিযান পরিচালনাকারী চান্দগাঁও সার্কেলর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযানে গিয়ে লিংক রোডের বায়েজিদ অংশের পাশে পাহাড়ে দেখলাম ৩০ ফুট প্রশস্ত খাল দেয়াল দিয়ে এক ব্যক্তি নিজের সীমানায় নিয়ে নিয়েছে। সেটা আমরা ভেঙে দিয়েছি।
“এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর সীমানা সংলগ্ন অংশে এক ব্যক্তি একটি ছড়ার ভিতর দেয়াল নির্মাণ করে ফেলেছে। একটা প্রাকৃতিক ছড়ায় কিভাবে প্রতিবন্ধকতা থাকে? সেটিও ভেঙে দেয়া হয়েছে। এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি ওই অংশটি তাদের জমি বলে দাবি করেছে।”
ছয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আটজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রায় তিনশ জন উচ্ছেদকারী ও তিনটি স্কেভেটর নিয়ে ছয় ঘণ্টা ধরে উচ্ছেদ অভিযান চলে।
এসময় লিংক রোডের বায়েজিদ অংশে ১১০টি, সীতাকুণ্ড অংশে ৭০টি এবং হাটহাজারী অংশের ১৯০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া কিছু সীমানা দেয়ালও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মেট্রো) নুরুল্লাহ নূরী বলেন, “আমরা আগে সার্ভে করে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে যে ৩৭০ টি স্থাপনা পেয়েছি সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। আরো উচ্ছেদ করা হবে কিনা তা নির্ধারণ করার আগে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে বসতে হবে।
“অভিযান চলাকালে আরেফিন নগর অংশে ৩০টি স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। যারা নিজেদের সিটি করপোরেশনের কর্মচারী দাবি করেছেন। যা আমরা তাৎক্ষণিক যাচাই করতে পারিনি।”
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী বলেন, তারা জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাবে বলে জানিয়েছে। সার্ভেতে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও পাহাড়ের জমিতে অবৈধ বসতি সেগুলোই ভাঙা হয়েছে।
লিংক রোড নির্মানকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “রাস্তার দু’পাশে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা সেগুলো আমরা উচ্ছেদের জন্য বলেছিলাম।”
এরআগে গত বছর জুনে এই সড়কের দুপাশে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু এরপর পাহাড় রক্ষায় আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সড়কটির দুপাশে সরকারি জমির পাশাপাশি পাহাড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও আছে। নতুন সড়কটি নির্মাণে প্রায় ১৮টি পাহাড় কাটা হয়। সড়কের কাজ যত এগিয়েছে দুপাশের পাহাড়ে বসতি ও স্থাপনার সংখ্যাও তত বাড়ছে।
সোমবার উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও টেলিফোন নম্বর সংগ্রহের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি বলে জানান অভিযানে থাকা জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা।
৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিলেও সে অনুযায়ী কাজ না করে পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করায় ২০১৭ সালে সিডিএকে দুই দফায় নোটিশ দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয় ১০ লাখ টাকা।
গত বছরের ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে শুনানি শেষে ‘পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ও ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করায়’ সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদনের চেয়ে ৬৯ হাজার ২১৯ দশমিক ৭২০ ঘনফুট বেশি পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছিল অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। সেখানে পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল আড়াই লাখ ঘনফুটের মতো।
পাশাপাশি হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের নির্দেশনা না মেনে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়া করে পাহাড় কাটার প্রমাণ মেলে।
এরপর ঝুঁকি কমাতে আবারও পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি চায় সিডিএ। সে অনুমতি এখনো মেলেনি।
তবে সিডিএ সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় সংলগ্ন অংশে রিটেনশন দেয়াল নির্মাণ করে ঝুঁকি কমাতে চায়। ২০০৩ সালে প্রথম পাহাড়ের ভিতর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট অংশ থেকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত এই সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
নকশাসহ নানা জটিলতায় ২০১৬ সালের শেষ দিকে এসে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
আরও পড়ুন-