খালের বাঁধ সরবে ৩০ জুনের মধ্যে, সিডিএ চেয়ারম্যানের আশ্বাস

বারবার সিটি মেয়রের আহ্বান এবং বছরের প্রথম ভারী বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার পর ৩০ জুনের মধ্যে খালে দেয়া বাঁধগুলো সরানোর আশ্বাস দিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2021, 05:12 PM
Updated : 14 June 2021, 05:18 PM

সোমবার নগরীর টাইগার পাসের অস্থায়ী কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় এ আশ্বাস মেলে।

সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন বলেন, “আমরা সব সেবা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাই। একে অপরকে দোষারোপ করলে কাজ হবেনা। খালে কাজের জন্য যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তা চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে অপসারণ হবে।”

প্রকল্পের পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান সিডিএ চেয়ারম্যান দোভাষ।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।

২০১৭ সালের ৯ অগাস্ট একনেকে অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে।

পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে নালা তৈরি করা হবে এক হাজার ৭৭ কিলোমিটার। প্রায় ১০৮ একর জমি অধিগ্রহণ ও রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে এক লাখ ৭৬ হাজার মিটার। ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হবে।

এছাড়াও ছয়টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর স্থাপন, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ স্থাপন, বন্যার পানি সংরক্ষণ জলাধার স্থাপন তিনটি, বিদ্যমান নালার সংস্কার ও মেরামত, দুই হাজার বৈদ্যুতিক পোল স্থানান্তর এবং ৮৮০টি স্ট্রিট লাইন স্থাপন হবে।

সোমবারের সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে আশা করা যায়। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনও খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে। সিডিএ কর্তৃপক্ষ তা সরাচ্ছে। তবে জলাবদ্ধতা যাতে এবারের বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ না বাড়ায় তা নিয়ে সব সংস্থার সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন।

“সেই মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করতে হবে সব সংস্থাকে। না হয় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেয়া মেগা প্রকল্পের টাকার অপচয় হবে, যা কাম্য নয় “

নগরীর জলবদ্ধতার জন্য কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং না হওয়া এবং নদী-খালে পলিথিন ফেলাকে দায়ী করে মেয়র রেজাউল বলেন, পলিথিন উৎপাদন বন্ধে সিসিসির উদ্যোগে অভিযান শুরু হবে।

আরএস ও সিএস অনুযায়ী নতুন খাল খননের পাশাপাশি বিলীন ও দখল হওয়া খাল পুনঃরুদ্ধার এবং চলমান মেগা প্রকল্পে স্থানীয় কাউন্সিলরগণদের মতামত ও তাদের সাথে নিয়ে কাজ পরিচালনার আহ্বান জানান মেয়র।

সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “২০১৬ সালের মাস্টারপ্ল্যানে পরিকল্পনা নেয়ার ক্ষেত্রে সিসিসির মতামত না নেওয়া হলে এখনই তা নেওয়া দরকার। না হয় জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।”

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনসট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর পঙ্কজ মল্লিক সভায় বলেন, “বারবার সব সংবাদমাধ্যমে মেগা প্রকল্প বলা হলেও সিডিএর সাথে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার। এর মধ্যে আমরা পেয়েছি ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ৩৬ টি খালের মধ্যে আমরা অর্ধেক খালের কাজ করেছি। বাকি অর্ধেক খালের কাজ এখনও বাকি। ড্রেনের কাজ করেছি মাত্র ২৬ কিলোমিটার কাজেই এখনি বেশি কিছু আশা করলে ভুল হবে।”

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, “২০১৬ এর ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয়নি বলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিসিসি ১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার কাজ করেছে।

“নগরীতে ১৩ খালের সাথে সমুদ্রের সংযোগ ও ১০ টি খালের সাথে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে বলে জানান। খাল খননের পাশাপাশি খালের দুই পাড়ে ২০ ফুটের রাস্তা নির্মাণ করলে খাল খননের পর মাটি সহজে অপসারণ করা যাবে।”

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সভায় জলবদ্ধতা নিরসনে নির্মাণাধীন স্লুইস গেট রক্ষণাবেক্ষণে সিসিসির প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শও নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, “স্লুইস গেট নির্মাণে আমরা এখনো ৬০ কোটি টাকার মধ্যে ৪০ কোটি টাকা পেয়েছি। আর নির্মাণের পর যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিসিসি’র তাই আমরা যাবতীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে পারি।

এ কাজে সিডিএ, সিসিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।  

সভায় সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নূরী, সিসিসি সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।