পাহাড় রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

পরিবেশের বিপর্যয় আর পাহাড় ধসে মৃত্যু ঠেকাতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবেশ ও অধিকার কর্মীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2021, 03:42 PM
Updated : 11 June 2021, 03:42 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে বিভিন্ন সময়ে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশে অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “প্রকৃতি বারবার সতর্ক করতে চাইলেও আমরা তা হই না। এখানে পাহাড় শেষ করে বিন্না ঘাস লাগানো হয়। রক্ষাকারীরা ১৮টা পাহাড় কেটে নির্বাক থাকেন। তারা এই পরিবেশের অংশ না।

“আমলার মামলা দিয়ে নদী রক্ষা, পাহাড় রক্ষা হবে না। প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়, নদী দেখতে হবে। তা না হলে চট্টগ্রামকে রক্ষা করা যাবে না। আপনি দ্রুত পদক্ষেপ নিন।”

২০০৭ সালের পাহাড় ধসের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের পাহাড় অপরাজনীতি ও অপেশাদার আমলাগিরির শিকার। ধসের পর গঠিত কমিটি ২১তম সভা করেছে। তাদের নির্লিপ্ততায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। নিয়ম ভেঙে পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের কারণে বর্ষা মৌসুমে পার্বত্য এলাকায় প্রায়ই পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

পাহাড়ের পাদদেশে অসহায় মানুষ বাধ্য হয়ে বসবাস করে উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার প্রশ্ন রাখেন, “যারা এসব বাসস্থান তৈরি করে তারা কী একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরে?”

“… ব্যক্তি মালিকানার পাহাড়ের দায় ব্যক্তির। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাহাড়ের দখলের দায় তো তাদের। শ্রমজীবী মানুষদের কি স্বল্প ভাড়ায় সেফটি নেটের মাধ্যমে নিরাপদ আবাসন দিতে পারি না?”

বায়েজিদ লিংক রোডে ৯০ ডিগ্রি খাড়া করে কিভাবে বালির পাহাড় কাটা হলো সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই হলো আমাদের আমলারা। তারা মানুষের পক্ষে আচরণ করে না।”

সমাবেশে এই প্রকৌশলী ১১ জুনকে পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।

পরিবেশ সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, “যারা পাহাড় দখল করেছেন তাদের তালিকা পাহাড় রক্ষা কমিটি করেছিল। কারো বিরুদ্ধে আজও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

“যে হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে এক দশক পর কোনো পাহাড় থাকবে না। পাহাড়, সমুদ্র, নদীর যে নান্দনিক চট্টগ্রাম তা থাকবে না। জনমত পাহাড় রক্ষার পক্ষে। চট্টগ্রামের মানুষ বাধ্য হলে যে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”

তিন পার্বত্য জেলার পাহাড় ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, “জলবায়ু ফান্ডের টাকায় কোটি টাকায় ঢাকা শহরে ফুটওভার ব্রিজ হয়। অথচ পাহাড় রক্ষায় একটি টাকা খরচ হয় না।”

প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, “একটা গোষ্ঠী লাগামহীন অর্থ আয়ের জন্য পরিবেশ ধ্বংস করছে। কদিন পরই বর্ষা। যদি পাহাড় ধসে কোনো ক্ষতি হয় তার দায় কী প্রশাসন বা সরকার নেবে?

সাংবাদিক প্রীতম দাশ প্রশ্ন তুলে বলেন, “১০ বছরে পরিবেশ আদালতে কয়টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে? সেই আদালতে বিচারক থাকে না। পাহাড় কাটা চলছে বছর জুড়ে। শুধু দিবস আর বর্ষা এলে প্রশাসন সক্রিয় হয়।”

২০০৭ এবং ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে সমাবেশ শেষে মোমবাতি জ্বালানো হয়। প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের জুন মাসে ভারি বর্ষণে রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।

পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুব মৈত্রীর খোকন মিয়া, নারী প্রগতি সংঘের এস এম এরশাদুল করিম, চেরাগী আড্ডার এডমিন শৈবাল পারিয়াল, কারিতাস চট্টগ্রামের শ্যামল মজুমদার, ইকো'র সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এস এম আবু ইউসুফ সোহেল, সাংবাদিক স্বরূপ ভট্টাচার্য, শফিকুল ইসলাম সাজীব, সংগঠক সুপায়ন বড়ুয়া, ডা. মো. মহসিন, শিমুল দত্ত, মতিউর রহমান শাহ ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী তিতুমীর শাহ বান্না, নারী প্রগতি সংঘের তপন কান্তি দে প্রমুখ। সমাবেশে সংহতি জানায় পরিবেশ ছাত্র ফোরাম।