বুধবার দুপুরে সড়কের বায়েজিদ বোস্তামিমুখী লেনটিতেও যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সড়কটির নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
এর আগে সোমবার ফৌজদারহাটমুখী লেনটি বন্ধ করা হয়েছিল। এখন সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট অংশ থেকে নগরীর বায়েজিদ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি নির্মাণে প্রায় ১৮টি পাহাড় কাটা হয়। পাহাড়গুলো খাড়াভাবে কাটায় সেগুলো ধসে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
৬ জুন বন্দর নগরীতে প্রবল বর্ষণের পর সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন মাসের জন্য সড়কটি বন্ধ করা হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে সড়কে যান চলাচল শুরু হলেও পুরো কাজ শেষ হয়নি, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়নি।
প্রকৌশলী হাসান বলেন, “এখানকার ১৮টি পাহাড়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি পাহাড় ও কিছু অংশ আছে। সড়কটি খোলার পর থেকে এটি পর্যটন স্পট হয়ে গিয়েছিল। সোমবার থেকে একপাশ বন্ধ করা হলেও আর ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই পুরো রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।”
তিনি জানান, সড়কে ওভার ব্রিজসহ কিছু নির্মাণ কাজ বাকি আছে। খাড়া পাহাড়ের ঝুঁকি কমাতে কোথায় কাটতে হবে তা চিহ্নিত করেছেন তারা।
“কতটুকু কাটব সেটা বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের পর পরিবেশ অধিদপ্তরকে ড্রইং ডিজাইনসহ লিখিতভাবে জমা দেব। পাহাড়ের রিটেইনিং ওয়ালের কাজও বাকি আছে। সব আমরা তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে চাই।”
এই সড়কটির কাজ শেষে পুরোপুরি চালু হলে কাপ্তাই, রাঙামাটি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা যানবাহন নগরীতে প্রবেশ না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারবে।
চট্টগ্রাম বায়েজিদ লিংক রোড করার সময় খাড়া করে পাহাড় কাটায় ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ের কিছু অংশ ধসে পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছিল এক পাশের গাড়ি চলাচল। ছবি: সুমন বাবু
সড়ক তৈরিতে খাড়াভাবে কাটা পাহাড়গুলোর ঝুঁকি কমাতে আবারও কাটতে চেয়েছিল সিডিএ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে গত বছরের শেষ দিকে অনুমতি চেয়েও পায়নি তারা।
পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়। যে কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
ওই সড়কের দু’পাশে এখন আটটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
২০১৬ সালের জুনে ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এই লিংক রোড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরুতে দুই লেইনের সড়ক করার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের অক্টোবরে সড়কটি চার লেইনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ কোটি টাকা।
২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিলেও সে অনুযায়ী কাজ না করে পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করায় ২০১৭ সালে সিডিএকে দুই দফায় নোটিস দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয় ১০ লাখ টাকা।
এরপরও পাহাড় কাটা থামেনি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজা, হাটহাজারীর জালালাবাদ মৌজা এবং সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর মৌজায় প্রায় ১৮টি পাহাড় কাটা হয় বলে অভিযোগ।
এই সড়ক তৈরিতে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়া করে পাহাড় কাটার প্রমাণও মেলে। ছবি: সুমন বাবু
গত বছরের ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে শুনানি শেষে ‘পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ও ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করায়’ সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদনের চেয়ে ৬৯ হাজার ২১৯ দশমিক ৭২০ ঘনফুট বেশি পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছিল অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। সেখানে পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল আড়াই লাখ ঘনফুটের মতো।
পাশাপাশি হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের নির্দেশনা না মেনে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়া করে পাহাড় কাটার প্রমাণ মেলে।
২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পরিদর্শনে এসে পরিবেশমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনও জানান, যে স্লোপ রাখার কথা ছিল তা রাখা হয়নি।