ভারি বর্ষণে চট্টগ্রামে জলজট, আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস

বর্ষা এগিয়ে আসায় চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে নগর কর্তৃপক্ষ শঙ্কা নিয়েই অপেক্ষা করছিল, সেই শঙ্কাকে বাস্তবে পরিণত করল এক সকালের বৃষ্টি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2021, 10:31 AM
Updated : 6 June 2021, 10:45 AM

রোববার সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে; মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এমন বৃষ্টি আগামী দুদিন চলবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বেলা ১২টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা।

আবহাওয়াবিদ ড. শহীদুল ইসলাম মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। আগামীকাল ও পরশু এরকম বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের ইয়াঙ্গন উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ অতিক্রম করে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃতি পেয়েছে।

রোববার সকালে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল মোটামুটি মাঝারি মাত্রা নিয়ে। সকাল ৯টার দিকে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। বৃষ্টিতে বেলা ১১টার মধ্যেই প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠে যায়।

নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, চকবাজার কাঁচা বাজার, মোগলটুলি, বেপারী পাড়া, সরাইপাড়া, হালিশহর, ঈদগাহ ডিটি রোড, বাকলিয়া ডিসি রোড, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, কমার্স কলেজ রোড, সিডিএ আবাসিকের কয়েকটি সড়কে দুপুরে হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

এছাড়া নগরীর ওয়াসার মোড়, বাকলিয়ার কয়েকটি এলাকা, পাঠানিয়া গোদা, জামালখান শিকদার হোটেলের পাশের গলি, গোয়ালপাড়াসহ কিছু এলাকাতেও পানি উঠেছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয় কর্তৃপক্ষ- সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি উঠছে। খাল-নালায় আবর্জনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতাও জলজটের কারণ।

নগরীর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের ঝর্ণাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেলিম উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানকার আজব বাহার খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সিডিএ’র প্রকল্পের কাজে। আজ সকালে হাঁটু পানি উঠেছে। অথচ আগে আমাদের এলাকায় পানি উঠত না। এখন যতবার বৃষ্টি হয় ততবার পানি ওঠে।”

সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে বেলা ১০টার পর বহদ্দারহাট এলাকার পাঁচতলা স্বজন সুপার মার্কেটের নিচ তলার প্রায় একশ দোকানের সবগুলোতে পানি ঢুকে যায়।

মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পাশেই সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন একটা মার্কেট আছে নালার ওপর। ওই নালা পরিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে ময়লা আবর্জনা সরানো যায় না। তাই পানি ওঠে, আমরা খুব কষ্টে আছি।”

বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় দেখা যায়, নিচের সড়কে পানি থাকায় বেশিরভাগ গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করছে। নগরীর দুই নম্বর গেইট মোড়, প্রবর্তক মোড় ও ডিসি রোডে পানির পরিমাণ ছিল বেশি। প্রবর্তক মোড় এলাকায় হাঁটু পানি ডিঙিয়ে পথচারী এবং যানবাহন চলতে দেখা গেছে।

গত ১৩ মে ঈদের দিন সকালে নগরীতে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর ১ জুন প্রাক মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১৬২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ওইদিনের বৃষ্টির বেশিরভাগ সময় ভাটা থাকায় নগরীর দুয়েকটি স্থান ছাড়া কোথাও পানি ওঠেনি।

সেদিনই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যানের সঙ্গে এক বৈঠকে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর খালগুলোকে পুরনো রূপে ফেরাতে এবং খালে দেওয়া বাঁধগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন।

এরপর ৩ জুন এক মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, খালের বাঁধ সরানো না হলে এবার ‘গলা পানিতে ডুববে নগরী’। খাল-নালায় পলিথিন ও আবর্জনা ফেললে জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন মেয়র।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পরিচ্ছন্নতা স্ট্যান্ডিং কমিটর প্রধান মোবারক আলী বলেন, “কিছু এলাকায় দ্রুত পানি নেমেও গেছে। অতি বৃষ্টির কারণে উঠলেও নেমেও গেছে।

“পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। লাভ লেইন স্মরণিকা ক্লাবের সামনেও পানি উঠেছে। সেখানে পানি নামার পথ আটকানো ছিল। তা সরানো হয়েছে।”

বিভিন্ন এলাকায় খালের বাঁধগুলো পুরোপুরি সরিয়ে না নেওয়ায় পানি উঠছে দাবি করে তিনি বলেন, “সিডিএ বলেছে দ্রুততম সময়ে বাঁধ তুলে দেবে। আশাকরি বর্ষা পুরোদমে শুরুর আগেই অপসারণ হবে।”

কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, নালার আবর্জনা অপসারণে ওয়ার্ডে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। নালা-নর্দমায় ময়লা ফেলা বন্ধে কিছু সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। আগামী সাধারণ সভায় সেসব চূড়ান্ত হবে। এরপর থেকে জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে।