মেঘনা-পদ্মা-ডাকাতিয়ার সংযোগস্থল থেকে দৈনিক ৯০ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। তিন নদীর মোহনায় চাঁদপুরের ওই স্থান থেকে পানি মিরসরাইয়ের শিল্প নগরে পৌঁছাতে প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে এই দীর্ঘ দূরত্বে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি আনার সময় পথে হাজিগঞ্জ, লাকসাম, ফেনী, বারৈয়ারহাটসহ কয়েকটি স্থানে প্রায় ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহেরও পরিকল্পনা আছে ওয়াসার। বাকি ৪৫ কোটি লিটার পানি যাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে।
তবে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠায় বিকল্প হিসেবে মেঘনা মোহনা থেকে পানি উত্তোলনের প্রস্তাব করা হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুটো প্রস্তাবই পরিকল্পনা কমিশনে আছে। ৬ জুন এ বিষয়ে বৈঠক হবে।
“আগে হালদা তীরে মোহরা পানি শোধনাগার ফেইজ-২ যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল, তার বিকল্প হিসেবে মেঘনা থেকে পানি আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করি যে কোনো একটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাব।”
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ইন্সটিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) ধারণাপত্রটি তৈরি করেছে।
ধারণাপত্রে, মেঘনা মোহনা থেকে পানি উত্তোলনের পর ইনটেক স্টেশন, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বুস্টিং স্টেশন ও রিজার্ভার করার প্রস্তাব আছে। তবে ১৩৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন তৈরি করতে কি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে এবং প্রকল্পে মোট কত ব্যয় হবে তা উল্লেখ নেই।
প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, মেঘনা মোহনার প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে ৪৫ কোটি লিটার করে দুই ফেইজে মোট ৯০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন সম্ভব বলে জানানো হয়েছে ধারণাপত্রে। এর মধ্যে রুট লাইনে থাকা বিভিন্ন এলাকায় পানির চাহিদা অনুসারে ৪৫ কোটি লিটার সরবরাহ করা যাবে। বাকি ৪৫ কোটি লিটার মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ব্যবহার হবে।
শিল্প নগরে ২০৪০ সাল নাগাদ পানির চাহিদা হবে সাড়ে ৯৬ কোটি লিটার। সেই চাহিদা পূরণে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ পানি, হালদা নদী, মেঘনা নদী, ফেনী-মুহুরী-সিলোনিয়া নদী, ছোট ফেনী নদী, ফেনী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং সাগরের পানিকে ডিস্যালাইনেশন করার প্ল্যান্ট বসানোরও পরিকল্পনা আছে।
শুরুতে এই প্রকল্পে পানি সরবরাহের জন্য ৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কোটি লিটার শোধন ক্ষমতার ‘মোহরা পানি শোধনাগার ফেইজ-২’ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। হালদা নদীর মোহরা সংলগ্ন অংশ থেকে মিরসরাইয়ে শিল্প নগরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার।
ওয়াসা চেয়েছিল, পাইপ লাইনের মাধ্যমে পারিশোধিত পানি সেখানে পৌঁছাতে। ওয়াসার প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে আইডব্লিউএম গত বছর একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রকল্পটির এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
ওই প্রতিবেদন নিয়ে গত বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অধিদপ্তরে সংশ্লিষ্টদের সভা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে পরিবেশগত প্রভাব উল্লেখ না থাকা, তথ্যের ঘাটতিসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে পরিবেশবাদী, মৎস্য বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে আপত্তি ওঠে।
এরপরও ওই প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চট্টগ্রাম ওয়াসা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ওয়াসার একজন প্রকৌশলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হালদার প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে। ওই প্রকল্পের জন্য আরো কিছু ছাড়পত্র ও ডকুমেন্ট চেয়েছিল। এরপর মেঘনা মোহনা থেকে পানি আনা যায় কিনা তা জানতে চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
“তারপর তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। একটি ধারণাপত্র তৈরি করে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এখন পরিকল্পনা কমিশনে বৈঠক হবে রোববার।”