মিতু হত্যা: জবানবন্দি দিলেন মুছার স্ত্রী

চট্টগ্রামে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার ‘পলাতক’ আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2021, 02:55 PM
Updated : 31 May 2021, 02:55 PM

নিহত মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের করা হত্যা মামলার প্রধান আসামি পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ ছিলেন মুছা। মামলার আসামিও তিনি।

সোমবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মো. রেজার কাছে পান্না আক্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পান্না আক্তার সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার সাথে তার স্বামী মুছার সম্পৃক্তার বিষয়ে বলেছেন।”

তবে পান্না আক্তার জবানবন্দিতে কী কী বলেছেন, তা জানা যায়নি।

মুছা এখনো ‘পলাতক’ বলে জানান এই পিবিআই কর্মকর্তা; যদিও তার স্ত্রীর দাবি, পাঁচ বছর আগে মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তাকে পুলিশ পরিচয়ে ধরে নেওয়া হয়েছিল।

২০১৬ সালের ৫ জুন বন্দরনগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।

পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে তিনি মামলা করেন।

ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য শুরুতে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও ২৬ জুন মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তকারীরা বলেছিলেন, খুনিরা ‘পেশাদার অপরাধী’।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও দেখে পুলিশ যাদের চিহ্নিত করেছিল, তাদের একজন হলেন বাবুলের ‘সোর্স’ মুছা। আদালতে ওয়াসিমের দেওয়া জবানদন্দিতেও মুছার নাম এসেছিল।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি আসে পিবিআইয়ের হাতে। এরপর গত ১১ মে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই।

পরদিন ১২ মে পিবিআই প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাবুল নিজেই তার স্ত্রীকে হত্যার সঙ্গে ‘জড়িত’।

এরপর বাবুলের করা মামলাটিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আর বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় নিজের জামাতাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নতুন একটি হত্যা মামলা করেন।

নতুন মামলায় বাবুলের ‘সোর্স’ মুছাকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় নাম থাকা মুছার বড়ভাই সাইফুল আলম শিকদার সাক্কুকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

পান্নার দাবি, ২০১৬ সালের ২২ জুন সকালে বন্দরনগরীর কাঠগড় এলাকার একটি বাসা থেকে তার স্বামীকে ‘পুলিশই’ তুলে নিয়ে যায়।

গত ১৩ মে মিতু হত্যার সঙ্গে মুছার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কী জানেন- এমন প্রশ্নে পান্না আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমি তাকে (মুছা) জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু সে কখনও খোলাসা করে কিছু বলেনি। তবে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবার আগে একবার ফোনে বলতে শুনেছি... ‘আমি সমস্যায় পড়ে গেছি। আপনার কথায় বিশ্বাস করে কাজ করেছি। আমার পরিবারের কিছু হলে মুখ খুলতে বাধ্য হব স্যার’।

“২০০৩ সাল থেকে আমার স্বামী বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স ছিল। বাবুল সাহেবের যত কাজ, প্রায় সব কিছুর পেছনে মুছার ভূমিকা ছিল। বাবুলের সাথে মুছার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তিনি বিদেশে গেলেও আমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ রাখতেন।”

একসময় সৌদি আরবে থাকা মুছা ২০০২ সালে দেশে ফিরে বালু সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। তখনই পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ‘সখ্য’ গড়ে ওঠে।

২০০৩ সালে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সাথে পরিচয় হওয়ার পর মুছা তার ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ শুরু করে।

পিবিআই’র দাবি, মিতু হত্যার পর লোক মারফত কয়েক দফায় মুছাকে টাকা পাঠিয়েছিল বাবুল আক্তার।