টিকার নতুন সরবরাহ না আসলে শুধু নগরী নয়, পুরো চট্টগ্রাম জেলাতে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবারের হিসাবে সাড়ে সাত হাজার ডোজের মতো টিকা মজুত আছে উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, “আগামী দুই-একদিন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম চলতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত টিকা প্রদান পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।“
চট্টগ্রামে এক লাখের কিছু বেশি এবং সারাদেশে ১৭ লাখের মত দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া বাকি বলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
ঈদের আগে পর্যন্ত প্রতিদিন স্বাভাবিক গতিতে নগরীর ১১টি কেন্দ্রে এবং ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হলেও ছুটির পর থেকে প্রায় কেন্দ্রেই দেওয়ার হার একেবারে কমে গেছে।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড, যা উৎপাদন করছে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট।
মহামারীতে ভারত বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোম্পানিটি বাংলাদেশে দুই চালান পাঠানোর পর আর টিকা দিতে পারছে না।
এতে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচী নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার কোনো কোনো কেন্দ্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা দেয়া বন্ধ ছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বন্দরটিলা মাতৃসদন, সাফা মোতালেব মাতৃসদন, নৌবাহিনী হাসপাতাল, বিমানবাহিনী হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতাল কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের কোনো টিকা দেয়া হয়নি।
তবে ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৭১ শতাংশই করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, মজুত একেবারে কমে গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আমাদের মজুত শেষ হয়ে গেলে টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দেশের মতো স্বল্পতার কারণে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া জেনারেলি বন্ধ হয়ে গেছে। খুবই সীমিত পর্যায়ে ফ্রন্টলাইনার ও কয়েকটি বিশেষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে।“
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে খুবই সীমিত পর্যায়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে।
উভয় হাসপাতাল থেকে অনেকেই চিন্তিত মনে ফিরে গেছেন।
জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, ঈদের আগেরদিন থেকে ঢালাওভাবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া বন্ধ আছে। তবে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে চিকিৎসক, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধা ও ৬৫ উর্ধ বয়সীদের দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে।
তাদের কাছে যত ভায়াল টিকা রয়েছে তা দিয়ে শনি-রোববার পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানান তিনি। এ হাসপাতালে বুধবার ১৮০ জন দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন।
চসিক জেনারেল হাসপাতালেও বৃহস্পতিবার টিকা দেয়ার জন্য অনেকে ভিড় করলেও শুধু সীমিত পর্যায়ের কিছু ব্যক্তি দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিতে পেরেছেন। এ কেন্দ্রে এদিন টিকা নিয়েছেন ১৭৪ জন।
জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার টিকা দিতে এসে ফিরে যাওয়ার পথে সিনেমা প্যালেস এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ আবুল হাশেম জানান, তিন গত ১৫ মার্চ টিকার প্রথম ডোজ দেন। গত দুইদিন ধরে হাসপাতালে এসেও দ্বিতীয় টিকা দিতে পারেননি। তাকে জানানো হয়েছে, টিকা আসলে পরে যোগাযোগ করতে।
সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বী বলেন, সরকার থেকে টিকা সরবরাহ করা হলে পুনরায় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
লোকজন এসে ফিরে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান কার্যক্রম এখনো একেবারে বন্ধ হয়নি। সে কারণে কোনো কেন্দ্রে নোটিশও দেওয়া হয়নি। এখনও যেসব কেন্দ্রে টিকা রয়েছে সেখানে দেওয়া হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন এক হাজার ৭২৬ জন। এ পর্যন্ত টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছেন মোট তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৪জন।
এদের মধ্যে মহানগরীতে এক লাখ ৮০ হাজার ৪৩ জন এবং ১৪ উপজেলায় এক লাখ ৫৮ হাজার ৪০১ জন।
এ পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন মোট চার লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০জন।
চট্টগ্রামে নগরীর ১১টি এবং ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে। সেসময় দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি প্রথম ডোজও দেওয়া হচ্ছিল। ২৬ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া।
দেশজুড়ে টিকা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়।