পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে প্রকাশ্য রাস্তায় মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পিবিআই।
Published : 12 May 2021, 02:53 PM
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই হত্যাকাণ্ডে বাবুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা জানানোর পর মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা হওয়ার পর বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামের আদালত ভবনে নেওয়া হয়।
এরপর তাকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে বাবুলের পক্ষে জামিন চান তার আইনজীবী।
শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় পিবিআইকে।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়, যার বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই।
সে সময় প্রায়ই জঙ্গি হামলা আর হত্যার ঘটনা ঘটছিল দেশে। আর বাবুল আক্তার ছিলেন চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন কর্মকাণ্ডের একজন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা। ফলে প্রাথমিকভাবে মিতু হত্যার পেছনে জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে ভাবা হচ্ছিল।
কিন্তু কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেও গোয়েন্দা পুলিশ ওই হত্যা রহস্যের কিনারা করতে পারছিল না।
এদিকে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে নিজেই সন্দেহের আঙুল তোলেন।
পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের যোগসাজশ রয়েছে বলে তার ধারণা।
আদালতের আদেশে পরে মিতু হত্যা মামলা যায় পিবিআইয়ের হাতে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ তারা পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
“বাদী হিসাবে তার দায়ের করা মামলায় আইন অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করা যায় না। তার দায়ের করা মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।"
মামলার অপর আসামিরা হলেন- বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।
মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল এক এনজিও কর্মকর্তার সঙ্গে ‘পরকীয়ায়’ জড়িয়ে পড়ায় মিতুর সাথে তার কলহ চলছিল। ‘এর জেরেই’ মিতুকে হত্যা করা হয়।
“বাবুল এখানে পরিকল্পনাকারী। অন্য যারা আসামি তারা আগের মামলায় তদন্তে এসেছিল। তাদের সাথে সম্পৃক্ততায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”
পাঁচলাইশ থানায় এই মামলা করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাবুলের করা পুরনো মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা চট্টগ্রামের আদালতে গিয়ে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এখন আদালত তা গ্রহণ করলেই আগের মামলার সমাপ্তি ঘটবে।
এক সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনারের দায়িত্ব পালন করা বাবুল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামে পিবিআইয়ের মেট্রো অঞ্চলের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখী হওয়ার পর থেকে তদন্তকারীদের হেফাজতেই ছিলেন। বুধবার মামলা হওয়ার পর বিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হোসেন আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, “বাবুল আক্তার বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন, সে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমরা আদালতে দাখিল করেছি। আজ পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা নতুন হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে উনাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ডে আমরা হত্যার মোটিভ জানার চেষ্টা করব।”
অন্যদিকে বাবুল আক্তারের আইনজীবী আরিফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আমার মক্কেল ভিকটিমাইজ বলে মনে করি। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”