বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হাজির হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হবে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালে বাবুল আক্তারের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে পিবিআই।
“মিত্যু হত্যার সঙ্গে স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে নতুন হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”
এর পরপরই চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যান মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন, যিনি ২০১৭ সালের জুন থেকে বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন ।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার নিজেই।
সেই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইয়ের কমর্কর্তারা বেলা সোয়া ১২টার দিকে চট্টগ্রামের আদালত ভবনে হাজির হন।
সব প্রক্রিয়া শেষে বেলা ১টার দিকে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা। তা এডিসি (প্রসিকিউশন) শাখায় নথিভুক্ত করা হয়।
এক সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে উপকমিশনারের দায়িত্ব পালন করা বাবুল আক্তার মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামে পিবিআইয়ের মেট্রো অঞ্চলের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখী হওয়ার পর থেকেই তদন্তকারীদের হেফাজতে আছেন।
শ্বশুরের করা মামলায় বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে পিবিআই প্রধান জানিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে বাবুলকে নিয়ে সন্দেহের কথা বলতে শুরু করেন তার শ্বশুর মোশাররফ।
তিনি বলেন, “এখন যেসব শুনছি, তার কিছুটাও যদি সত্য হয় তাহলে তো বুঝব, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বাবুল আমার বাসায় থেকে অভিনয় করেছে।
“আসলে তখন তো আপনারা তাকে প্রশ্ন করতে পারেন নাই। আমিই আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আসলে ভুলটা আমারই হয়েছে। এটা তার এক ধরনের কৌশল ছিল।”
কেন বাবুলকে সন্দেহ- তার জবাবে তিনি বলেছিলেন, বাবুলের অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে তার মেয়েকে খুন হতে হয়েছে।
চট্টগ্রামে গিয়ে আগের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছিলেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা সাহেদা মোশাররফ নীলা।
নিজের এলাকার এক নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিল তখন। ওই নারীর স্বামী পুলিশের এসআই আকরাম হোসেন লিটনের মৃত্যুর তদন্তও দাবি করেছিলেন মোশাররফ। তার ভাষ্য, ওই খুনের তদন্ত তার মেয়ে খুনের জট খুলে দিতে পারে।
“বাবুল আক্তারের পরকীয়া, মিতুর সঙ্গে ঝগড়া, মিতুর আত্মহত্যার চেষ্টা করা, ঢাকায় বাবা মায়ের কাছে চলে আসতে চেয়েও না পারার কথাগুলো তদন্ত কর্মকর্তাকে বিশদভাবে জানানো হয়েছে,” বলেছিলেন তিনি। তখন মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিল ডিবি।
সেই নারী অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলন করে বাবুলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে বাবুল আক্তার নানা গুঞ্জনে নীরব থাকলেও শ্বশুরের সন্দেহ প্রকাশের পর এক ফেইসবুক পোস্টে জবাব দিয়েছিলেন।
‘সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’ শিরোনামে দুই হাজারের বেশি শব্দের ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি তার নিহত স্ত্রী মিতুর স্কুলপড়ুয়া এক খালাত বোনের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে রাজি না হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসায় তার উপর ক্ষিপ্ত হন তারা।
“এতে তারা ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণও হয়েছিলেন। বলেছিলেন, এর পরিণাম হবে খারাপ এবং আমাকে পচিয়ে ছাড়বেন তারা,” লিখেছিলেন বাবুল।
তদন্তের বিষয়ে দক্ষ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও লিখেছিলেন, “বাস্তব জীবনটা কোনো চলচ্চিত্র না। আমি সুপারকপের মতো উঠে গিয়ে স্ত্রীর খুনি বের করে ফেলব?”
পুরনো খবর