‘এক টাকায় ঈদ আনন্দে’ শাড়ি-পাঞ্জাবিও মিলছে

এক টাকায় যখন চকলেটও পাওয়া যায় না, সেই সময়ে তা দিয়ে শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি কিংবা চিনি, ছোলা, সেমাই মিলছে; এ যেন রূপকথারই গল্প।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2021, 11:18 AM
Updated : 10 May 2021, 11:32 AM

সেটিকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে সংগঠনটি চালু করেছে ‘এক টাকায় ঈদ আনন্দ’কার্যক্রম।

নিরন্ন অসহায় মানুষ নিজের জন্য জামা কাপড়- শাড়ি, লুঙ্গি, প্যান্ট, পাঞ্জাবি কিংবা ছোলা, চিনি, সেমাই, নুডুলস যেটাই কিনতে চাইবেন, দাম দিতে হবে মাত্র এক টাকা!

সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকার রাজবাড়ি কনভেনশন সেন্টারে তিনদিনের এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

দরিদ্র লোকজন নামমাত্র মূল্যে তাদের পছন্দের পণ্যটি এখান থেকে কিনে মহাখুশী।

মঙ্গলবার থেকে নারায়নগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুরেও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ফাউন্ডেশনের প্রধান স্বেচ্ছাসেবক কিশোর কুমার দাশ।

চট্টগ্রামে সোমবার দুপুরে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

এরপর ‘বিক্রেতা’ হিসেবে তিনি শিশু ও বয়স্কদের মাঝে তাদের পছন্দের পণ্যটি তুলে দেন।

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় রাজবাড়ি কনভেনশন সেন্টারে ‘এক টাকায় ঈদ আনন্দ’ কেনাকাটার স্টল

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাদের কাজের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা করার কথাও জানান সিএমপি কমিশনার।

এই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে কনভেনশন সেন্টারটি উৎসবের আমেজ পেয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী লোকজন জড়ো হয়েছেন এক টাকায় তাদের পছন্দসহ পণ্যটি কিনতে।

শিশুরা যেমন বেছে নিচ্ছে পছন্দসই কাপড়, তেমনি বয়স্ক নারী, পুরুষও শাড়ি, লুঙ্গির পাশাপাশি সংগ্রহ করছেন মিষ্টান্নের এই ঈদের জন্য সেমাই, চিনি, ছোলাসহ গৃহস্থলী পণ্য।

বাজারের হাজার টাকার পণ্য তারা এক টাকায় কিনতে পেরে উচ্ছ্বসিত।

কেনাকাটা শেষে মো. মিন্টু নামে এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, লুঙ্গি, সেমাই, বিস্কুট, খেজুর কিনেছেন তিনি। যেগুলো বাজার থেকে কিনতে গেলে তাকে গুণতে হতো পাঁচ থেকে ছয়’শ টাকা। 

“কিন্তু আমি তা কিনেছি এক টাকায়।”

পছন্দের ফ্রগ কিনতে পেরে উচ্ছাস দেখিয়েছে সাত বছরের শিশু সুমাইয়াও।

মমতাজ বেগম নামে এক নারী তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, গরীব মানুষ ঈদে যখন কাপড় তো দূরে থাক, সেমাই চিনি কেনার টাকা জোটাতে হিমশিম খায়, সেখানে নামমাত্র দামে শাড়ি, সেমাই কিনে বেশ আনন্দিত তিনি।

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় রাজবাড়ি কনভেনশন সেন্টারে ‘এক টাকায় ঈদ আনন্দ’ কেনাকাটার স্টল

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রধান স্বেচ্ছাসেবক কিশোর কুমার দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানুষ যখন আয় রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন, সে অবস্থায় আমরা চেয়েছি শিশু এবং অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা যেন ঈদে নতুন কাপড় পড়তে পারেন।“

করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সহায়তা হিসেবে নয়, বিভিন্ন ব্যক্তির সহায়তায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই মানুষ নিজেরা বাছাই করে তাদের কাপড় কিনুক। এক টাকা পরিশোধ করে তারা মার্কেটের একটা অনুভূতি নিক এখান থেকে।”

নতুন কাপড় নিয়ে নিজের শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে কিশোর বলেন, “আমার কাছে কাপড় আসত দুই/এক বছরে একবার। আমার কাছে কাপড় মানেই ছিল উৎসব।”

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মো. শামসুল আলম, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) সানা শামীনুর রহমান, উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক।

আরও পড়ুন