বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ: এবার বিদেশি প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছে সিসিসি

জমি সঙ্কটে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দু’বছর আগে থমকে যাওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে এবার একাধিক বিদেশি সংস্থার প্রস্তাব পেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2021, 05:20 PM
Updated : 3 May 2021, 05:20 PM

এর মধ্যে একটি সংস্থা নগরীর বর্জ্য সংগ্রহ থেকে কেন্দ্রে নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বটি চেয়েছে।

বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন এবং প্রকল্প প্রস্তাব চেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)। চলতি বছরের মধ্যেই এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদী সংস্থাটি।

সোমবার নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে চায়নিজ ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহের কথা জানায়।

এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, “ডাম্পিং স্টেশনে স্তূপকৃত বর্জ্য শোধন করে বিদ্যুৎসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্য রূপান্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং নগরী পরিবেশবান্ধব হবে।”

প্রতিনিধি দলের উদ্দেশে মেয়র বলেন, “আমরা জমি দেব। সরকার থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুমোদন ও যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ আপনাদের করতে হবে।”

জবাবে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের ঢাকাসহ আরও ৩৪টি দেশে বাস্তবায়ন করছে তারা। জমি দিলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা আগ্রহী।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন চাইনিজ ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিও ঝাং।

মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা একাধিক মৌখিক প্রস্তাব পেয়েছি। এরমধ্যে সৌদি-জার্মান টেকনোলজি লিমিটেড নামের বিদেশি প্রতিষ্ঠান একটি প্রস্তাব দিয়েছে।

“তারা বর্জ্য সংগ্রহ, সংগ্রহের জন্য যাবতীয় যানবাহন ও লোকবল, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়াসহ সব ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে চায়। এজন্য তারা ৪০ একর জমি চায়। প্রতিষ্ঠানটির ফিজিব্যালিটি স্টাডি শেষের পথে। আশাকরি দ্রুত প্রকল্প প্রস্তাব পাব।”

মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, “চায়নিজ ইনভেস্টর এসোসিয়েশন নগরীতে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করতে চায়। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য দৈনিক ১২০০-১৩০০ টন করে বর্জ্য চায় তারা। প্রতি কেন্দ্রের জন্য তাদের ১২-১৩ করে জমি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। তাদেরও প্রস্তাবনা জমা দিতে বলেছি।”

বন্দর নগরীতে সংগৃহীত বর্জ্য হালিশহরের আনন্দবাজার এবং বায়েজিদের আরেফিন নগর এলাকায় দুটি নির্ধারিত স্থানে খোলা স্থানে ফেলা হয়। এরমধ্যে আনন্দবাজারে ১৫ একর এবং আরেফিন নগরে ১৯ একর জমি আছে সিসিসির।

বিদেশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় আছে জানিয়ে আবুল হাশেম বলেন, এ বছরের মধ্যে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখতে পাবেন।

এর আগে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর সিসিসি’র সংগ্রহ করা আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়।

ওই চুক্তির শর্ত অনুসারে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী তৃতীয় পক্ষ বাছাই করবে পিডিবি। এরপর তাদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পের পূর্ত কাজ শুরু হবে। বিওও (বিল্ড, ওন অ্যান্ড অপারেট) পদ্ধতিতে কেন্দ্রটি নির্মিত হবে।

চুক্তি অনুসারে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করতে দৈনিক আড়াই হাজার টন বর্জ্য বিনামূল্যে সরবরাহ এবং কেন্দ্র নির্মাণে বিনামূল্যে জমি দেওয়ার কথা ছিল সিসিসির।

কিন্তু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নে আনন্দবাজার এলাকায় ২৫ একর জমি প্রয়োজন, যে পরিমাণ জমি সেখানে সিটি করপোরেশনের নেই।

বর্জ্য পুড়িয়ে তাপ উৎপাদিত হলে সেই তাপে পানি বাষ্পীভূত করে তা দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল ওই প্রস্তাবে।   

উৎপাদিত ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিডিবির মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। জমি না পাওয়ায় সেই প্রকল্প আর এগোয়নি।