নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করলেন শফী ‘হত্যা’ মামলার বাদী

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় ‘পরিকল্পিত হত্যার’ অভিযোগ এনে করা মামলার বাদী মো. মইন উদ্দিন নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 01:56 PM
Updated : 2 May 2021, 07:18 PM

রোববার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় জিডি করার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া। 

শফীর শ্যালক মইন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তা চেয়ে আমি জিডি করেছি। মোহাম্মদপুরের যে এলাকায় আমি থাকি, তার পাশেই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখানে ইদানিং কিছু নতুন মুখ দেখছি।

“এছাড়া মামলা করার পর থেকেই ফেসবুকে নানা রকম লেখালেখি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার মনে হয়েছে সতর্ক হওয়া দরকার। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত। তাই জিডি করেছি। পুলিশ বলেছে সার্বিক সহযোগিতা করবে।”

এর আগে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে গত বছর ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন মঈন উদ্দিন।

রোববার পাঁচলাইশ থানার ওসি বলেন, জিডি’র বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 ‘হত্যা’ মামলাটির তদন্ত শেষে ১২ এপ্রিল পিবিআই এর আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে শফীর মৃত্যুর জন্য হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনকে দায়ী করা হয়।

প্রতিবেদনে এই মৃত্যুকে ‘দণ্ডার্হ নরহত্যাজনিত অপরাধ’ বলে উল্লেখ করা হয়।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা (বড় মাদ্রাসার) দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী।

নেতৃত্বের বিরোধের জেরে মৃত্যুর আগের দিন মাদ্রাসায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে শফী মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন। তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানিকেও বহিষ্কার করা হয়।

শফীর মৃত্যুর দিন আনাস মাদানি ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগের দিনের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার কারণে ‘টেনশনে হার্টফেইল’ করে তার বাবা মারা গেছেন।

হেফাজতের মধ্যে বিবাদের মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর শফীর শ্যালক মো. মইন উদ্দিন চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেন।

এতে অভিযোগ করা হয়, আহমদ শফীকে ‘মানসিক নির্যাতন করে’ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল।

শফীর মৃত্যুর পর নানামুখী আলোচনার মধ্যে গত বছরের ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল।

হাটহাজারী মাদ্রাসায় ওই সম্মেলনে সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

ওই সম্মেলনকে ‘অবৈধ’ বলে আসছিলেন শফীর অনুসারীরা।

নতুন ওই কমিটি গঠনের ছয় মাস না যেতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রীক বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার ঘটনার পর পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানে চাপে থাকার মধ্যে ২৫ এপ্রিল মধ্যরাতে এক বার্তায় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন জুনাইদ বাবুনগরী।

অবশ্য সেদিন মধ্য রাতেই প্রথমে তিন সদস্যের ও পরে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয় বাবুনগরী।

কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি ‘মুক্ত’ রাখার ঘোষণা দেয় মাদ্রাসাগুলোর নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।

এর তিন দিন আগে ২২ এপ্রিল হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় বাবুনগরী বিরুদ্ধে দুটি মামলাসহ মোট তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলার বিষয়টি জানাজানি হয় ২৬ এপ্রিল।

আরও পড়ুন