বিবাদে জড়িয়ে চমেক হাসপাতালে কর্মবিরতিতে শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের হাতাহাতি ও ধাওয়ার ঘটনায় বুধবার হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2021, 03:21 PM
Updated : 28 April 2021, 03:22 PM

বুধবার দুপুরে আগের রাতের ঘটনার নিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবস্থা গ্রহণের ‘আশ্বাস’ দেওয়া হলেও কাজে ফেরেননি কর্মবিরতিতে থাকা শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ আলোচনা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু বহিরাগত ছিল। তদন্ত কমিটি তাদের শনাক্ত করবে।

“ইন্টার্নদের সবাইকে আইডি কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হোস্টেলে বহিরাগত কেউ থাকলে বের করে দেওয়া হবে। আশাকরি যারা কর্মবিরতিতে গিয়েছেন, তারা আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করবেন।”

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে হাসপাতালের উপ-পরিচালককে প্রধান করা হবে বলেও জানান তিনি।

কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না দাবি করে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “অন্য ডাক্তাররা আছেন। এখন করোনাভাইরাসের কারণে অন্য রোগীর চাপও কম। সব মিলিয়ে সেবা এগিয়ে যাচ্ছে। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।“

চমেকে ছাত্রলীগের একটি অংশ ‘ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের’ নেতৃত্বে রয়েছে, যারা সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

ছাত্রলীগের অপর পক্ষটি শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও রাতে দু’দফায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিবদমান এই দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারী চমেক ছাত্র অভিজিৎ দাশ তাদের পক্ষের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় ক্যাফেতে আমাদের সহপাঠী ও জুনিয়রদের ওপর অতর্কিতে হামলা করা হয়। পরে আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিই। আহতরা চিকিৎসার জন্য গেলে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া নিয়ে আবার উত্তেজনা দেখা দেয়।”

ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. ওসমান গণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাসে বহিরাগতসহ ইন্টার্ন ডাক্তারদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছে। বহিরাগতদের নিয়ে তিনটি হোস্টেলে হামলা করে ভাংচুর করা হয়েছে।

“এরপর গত রাতে একজন ডাক্তার ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন, যিনি এসবের কিছুই জানতেন না। পরে আমরা হোস্টেল থেকে গেলে দু-তিনশ বহিরাগত হামলা করে।”

ঘটনার পর ইন্টার্ন অ্যাসোসিয়েশন হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে বহিষ্কার, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষানবিসদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের থাকতে না দেওয়ার দাবি জানায়।

এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট চমেক এর প্রধান ছাত্রাবাসে এই ‍দু’পক্ষ ঝগড়া ও মারামারিতে জড়ানোর পর কর্মবিরতিতে গিয়েছিল শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা। ওই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছিল।

পরে হোস্টেলে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস পেয়ে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছিল।

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের হাতে ছিল। বছর খানেক ধরে ছাত্রলীগের অন্য একটি অংশ ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জোরালো করে।