কোকেনকাণ্ড: বিচার শেষ করতে সময়ের আবেদন

তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় করা মাদক মামলার বিচার শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় চাওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2021, 02:22 PM
Updated : 31 March 2021, 02:22 PM

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের এই মামলাটি ২৮ মার্চের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছিল হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।

গত বুধবার (২৪ মার্চ) পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, মামলা পরিচালনায় সময় বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আবেদন করবে।  

বুধবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার সাক্ষী যেহেতু ৬৪ জন, তাই সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচার কাজ শেষ করতে বিচারিক আদালতের পক্ষ থেকে আরও ছয় মাস সময় চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে।”

এই মামলায় কারাগারে থাকা দুই আসামি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে গত বছরের ২০ অগাস্ট আদালত আদেশ প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেন।

পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ না হলে আসামিদের জামিনের আবেদন বিচারিক আদালতে বিবেচনা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় বিচারপতি এমদাদুল হক ও আকরাম হোসেন চৌধুরীর দেওয়া ওই আদেশে।

আদেশ অনুসারে সেই সময়সীমা শেষ হয় ২৮ মার্চ।

এদিকে বুধবার চট্টগ্রামে চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে এই মামলায় আরও দুইজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে মোট ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হল।

চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বলেন, বুধবার কোকেন জব্দ করার সময় উপস্থিত তখনকার কাস্টমস কর্মকর্তা মালেকীন নাছির আকন্দ এবং একটি বেসরকারি শিপিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফাতেমা আক্তার লীনা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

দুইজনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত আগামী ১২ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।

মামলা শেষ করতে বেঁধে দেয়া ২৮ মার্চের সেই সময়সীমা শেষ হলেও বুধবার আসামি পক্ষের কেউ জামিনের আবেদন করেনি বলে জানান বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ।

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রায় এক বছর নয় মাস পর তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটিতে আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় করা মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এরপর ওই বছরের ১৯ থেকে ২২ মে পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছিল। তারপর আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

আলোচিত এই মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, দুই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া, নূর মোহাম্মদের ভাই মোস্তাক আহম্মদ, খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে এম আজাদ এবং সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

এদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন। তার ভাই মোস্তক আহম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান এবং বকুল মিয়াকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। কারাগারে আছেন গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং আতিকুর রহমান। বাকি চার আসামি জামিনে আছেন।

মামলায় র‌্যাবের সম্পূরক অভিযোগপত্রে এই ১০ জনকেই আসামি করা হয়েছিল।

একই ঘটনায় চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটিও অধিকতর তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৯ জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে। তবে সেটিতে এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।

পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে বন্দরের পরীক্ষায় এসব নমুনায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাগারেই নমুনায় তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রামের বন্দর থানায় মাদক আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।

আরও পড়ুন