কোকেনকাণ্ড: সাক্ষ্যই শেষ হচ্ছে না, আরও সময় চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ

তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় করা মাদক মামলার বিচার উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর চার বছরে মামলায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এক চতুর্থাংশ সাক্ষীর।  

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2021, 02:25 PM
Updated : 24 March 2021, 02:25 PM

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আসামিদের আবেদন ও করোনভাইরাস মহামারীর কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়েছে।

এমন অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় উচ্চ আদালতে সময়ের আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন মামলা পরিচালনাকারী পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের এই মামলাটি ২৮ মার্চের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।

এদিকে বুধবার চট্টগ্রামে চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভুঁঞার আদালতে লিটন সেন ও গোবিন্দ বৈদ্য নামের জব্দ তালিকার দুই আসামি সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ দু’জন তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় জড়িত প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের অফিস ভবনের নিচতলার একটি অফিসে কর্মরত ছিলেন।

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন ফারুকী মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের কার্যালয় থেকে কম্পিউটার সিপিইউ, সিডি ও সিডি ড্রাইভ সংগ্রহের সময় তারা উপস্থিত ছিলেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার পর্যন্ত ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ৩১ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

এই মামলায় কারাগারে থাকা দুই আসামি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে গত বছরের ২০ অগাস্ট আদালত আদেশ প্রাপ্তির ছয়মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেন।

পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ না হলে আসামিদের জামিনের আবেদন বিচারিক আদালতে বিবেচনা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় বিচারপতি এমদাদুল হক ও আকরাম হোসেন চৌধুরীর দেওয়া ওই আদেশে।

আদেশ অনুসারে সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২৮ মার্চ। এই মামলায় মোট সাক্ষী ৬৪ জন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৬৪ জনের মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সাক্ষী আছে।

“করোনা মহামারীর কারণে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। এছাড়া আসামিরা বারবার উচ্চ আদালতে যাওয়ায় মামলার কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে পরিচালনা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে কিছু সময় লেগেছে। গত একমাসে ১২ জন সাক্ষী দিয়েছেন। আমরা আবার সময়ের আবেদন করব।”

পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আশা করি উচ্চ আদালত আমাদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করবেন। আসামিরা জামিনের আবেদন করলে সেটা বিচারিক আদালত বিবেচনা করবেন।”

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রায় এক বছর নয় মাস পর মামলাটিতে আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় করা মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এরপর ওই বছরের ১৯ থেকে ২২ মে পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছিল। তারপর আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

আলোচিত এই মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, দুই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া, নূর মোহাম্মদের ভাই মোস্তাক আহম্মদ, খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে এম আজাদ এবং সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

এদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন। তার ভাই মোস্তক আহম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান এবং বকুল মিয়াকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। কারাগারে আছেন গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং আতিকুর রহমান। বাকি চার আসামি জামিনে আছেন।

মামলায় র‌্যাবের সম্পূরক অভিযোগপত্রে এই ১০ জনকেই আসামি করা হয়েছিল।

একই ঘটনায় চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটিও অধিকতর তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৯ জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে। তবে সেটিতে এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।

পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে বন্দরের পরীক্ষায় এসব নমুনায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাগারেই নমুনায় তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রামের বন্দর থানায় মাদক আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।

সেসময়ের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান আটজনের বিরুদ্ধে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

এ কারণে ‘তদন্তে ত্রুটি’ আছে উল্লেখ করে আদালত ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর র‌্যাবের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল এ মামলায় অধিকতর তদন্ত শেষে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন র‌্যাব-৭ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

ওই বছরের ১৩ এপ্রিল শুনানি শেষে আদালত সম্পূরক অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নূর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই তেলের সাথে মিশিয়ে কোকেন আমদানি করা হয় এবং এই পুরো ঘটনার শুরু থেকেই তিনি অবগত ছিলেন।

আরও পড়ুন