চট্টগ্রামে ভোটের সংঘাত: অস্ত্রের হদিস মেলেনি, অস্ত্রধারীরাও লাপাত্তা

মাস গড়িয়ে গেল, মেলেনি সেই আগ্নেয়াস্ত্রের খোঁজ; পাওয়া যায়নি সেই যুবককেও, যিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ছিলেন।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2021, 03:49 PM
Updated : 3 March 2021, 03:49 PM

গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ হলেও অপরাধীকে ধরতে পুলিশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বলেই অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটে, যাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল।

ভোটের আগে ১২ জানুয়ারি নগরীর মোগলটুলি এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থকদের। তাতে নিহত হন আজগর আলী বাবুল একজন।

ভোটের দিন ২৭ জানুয়ারি সকালে নগরীর আমবাগান এলাকায় গুলিতে নিহত হয় আলাউদ্দিন নামে এক যুবক। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক নাশতা করতে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য।

ভোটের দিন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রের বাইরে এক যুবককে প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।

বাহাদুরের সমর্থক বাবুল নিহতের পর পুলিশ কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করেছিল।

বাহাদুরের সমর্থক বাবুল নিহতের পর পুলিশ কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। বাবুলের ছেলের করা মামলায় তাদের আসামি করা হয়।

পুলিশ সেদিন ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছিল বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেভেন পয়েন্ট ৬৫ বোরের দুটি এবং পয়েন্ট ৩২ বোরের একটিসহ মোট তিনটি পিস্তলের গুলির খোসা পাওয়া গিয়েছিল।

“নিহত বাবুলের পিঠে লাগা গুলিটি সেভেন পয়েন্ট ৬৫ বোরের পিস্তলের গুলি বলে ব্যালেস্টিক রিপোর্টে জানা গেছে,” বলেন তিনি।

তবে কার পিস্তলের গুলিতে বাবুল নিহত হয়েছিলেন, তা এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত।

তিনি বলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের দুই দফায় রিমান্ডে আনা হয়েছিল। কিন্তু গুলি যে করেছে, তাকে চিহ্নিত করা যায়নি এবং পিস্তলটিও উদ্ধার হয়নি।”

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কাদের জামিনে মুক্তি পান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট চলার সময় ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় ইউসেপ স্কুল কেন্দ্রের বাইরে গুলিতে ছেলে মো. আলাউদ্দিন আলমের মৃত্যুর খবরে সংজ্ঞা হারান তার মা।

ভোটের দিন আমবাগান এলাকায় গোলাগুলিতে নিহত আলাউদ্দিনের বোন জাহানারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “সকালে নাস্তা খেতে বের হয় আলাউদ্দিন। নাস্তা করে সে কাজে যাবার কথা ছিল। মোড়ে পৌঁছাতেই লাটিম মার্কার (আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর মার্কা) লোকজন এসে গুলি করে।”

সে ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় জাহানারা বাদী হয়ে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো আসামি ধরা পড়েনি এখনও।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার এসআই সোহরাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব আসামি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।”

তিনি জানান, ঘটনার পরদিন থুলশী থানা পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি বন্দুক উদ্ধার করেছিল। আর তারাও ঘটনাস্থল থেকে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের খোসা উদ্ধার করেছিলেন। মামলার তদন্তে উদ্ধার করা বন্দুকটি আমলে আনার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

এসআই সোহরাব বলেন, “এখনও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরীক্ষা করার জন্য আবেদন করা হবে, উদ্ধার করা বন্দুকটি থেকে ছোড়া গুলিতে আলাউদ্দিন মারা গেছে কি না।”

মামলার বাদী জাহানারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন, ঘটনার পরপর তারা এবং তাদের পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তবে এখন ফিরেছে।

“আসামিদের মধ্যে নাছির, ইমন ও জজ মিয়াকে বিভিন্ন সময়ে ঝাউতলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে আমি নাছিরের সাথে কথাও বলেছি। তাদের বিষয়ে পুলিশকে বলেছি। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে না।”

চট্টগ্রাম সিটি ভোটের দিন সকালে নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

নির্বাচনের দিন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া যুবককের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল গণমাধ্যমসহ সোশাল মিডিয়ায়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, সরু একটা গলি থেকে বের হয়ে পিস্তল হাতে গুলি ছোড়ে এক যুবক। কালো, প্যান্ট, হলুদ কালো জ্যাকেট পরা ওই যুবক গুলি ছোঁড়ার পর দলবল নিয়ে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালির নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অস্ত্রধারী ওই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তাকে ধরতে আমরা অভিযানও চালিয়েছি। কিন্তু সে পালিয়ে গেছে।”

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, গুলি বর্ষণকারী ওই যুবক নগর ছাত্রলীগে যুক্ত।

“বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি সে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে,” বলেন ওসি।