মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি রত্না-ঝর্ণারা
মিঠুন চৌধুরী, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 02 Mar 2021 09:35 PM BdST Updated: 02 Mar 2021 09:35 PM BdST
আগে যারা ৫০-১০০ টাকা দিত, এখন তারা দেয় ২০ টাকা; কেউ কেউ দিতেও চায় না। তাই অর্থ সংগ্রহ কমে অর্ধেকে নেমেছে, কিন্তু কোনো খরচতো কমেনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর থাবায় আয় কমে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা ফুঠে উঠেছে রত্নার এই কথায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ পেলেও আত্ম কর্মসংস্থানের মত পুঁজি নেই তাদের; দুয়েকজন ব্যবসার চেষ্টা করলে তাতেও ধাক্কা দিয়েছে কোভিড-১৯।
নগরীর আমবাগান, পাহাড়তলি, টাইগার পাস রেলওয়ে কলোনি, খুলশী, ঝাউলতা, আকবর শাহ, বারো কোয়ার্টার, কর্নেল হাট, মনসুরাবাদ, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস সাত-আটশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের।
‘হিজড়া’ বলে ঘরভাড়া পেতেও সমস্যা হয়; তাই কম ভাড়ার আবাস খুঁজে নিতে বারবার বদল হয় ঠিকানারও।
চট্টগ্রাম শহরের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আয়ের মূল উৎস ‘কালেকশন’। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নানা সরকারি বেসরকারি অফিস, দোকান এবং কমিউনিটি সেন্টার থেকে টাকা তোলেন তারা।

ঘুরে ঘুরে এই ‘কালেকশন’ নিয়ে নগরবাসীর নানা নানা অভিযোগ থাকলেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা ‘নিরুপায়’। আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত তাদের টাকা দিলেও তাতে ভাটা পড়ে করোনার সময়।
নগরীর খুলশী রেলগেইট এলাকার বাসিন্দা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রত্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আয় একদম কমে গেছে। আগে যেসব জায়গায় টাকা দিত, তাদের মধ্যে অনেকে এখন আর দিতে চায় না। কেউ কেউ দিলেও কম দেয়।
“ধরেন, আগে ব্যাংক বা বড় অফিসে সপ্তাহে একশ বা ৫০ টাকা দিত, তারা এখন দেয় ৩০ টাকা বা ২০ টাকা। পান দোকান বা ছোট দোকানে আগে দিত ২০/৩০ টাকা, তারা এখন দিতে চায় না; কেউ আবার ৫-১০ টাকা দেয়।”
রত্না বলেন, “আমাদের এলাকায় ৬০-৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছে। পুরো শহরে প্রায় ৭০০ জনের মত। করোনার আগে দুয়েকজন ছোটখাটো ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু করোনার সময় এলাকার মানুষের আয় রোজগার কমে গিয়েছিল। তাই দুয়েকজন যে সেলাইর দোকান বা ছোট পান দোকান করেছিল সেসব বন্ধ হয়ে গেছে।”
পাহাড়তলি এলাকার লিডার ফাল্গুনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে দৈনিক কালেকশনে একটা দল যদি ৫০০ টাকা পেত, এখন পায় ২০০-৩০০ টাকা। করোনার শুরুর দিকে সমাজসেবা আর জেলা প্রশাসন থেকে কয়েকবার ত্রাণ দিয়েছিল। কিন্তু এখন তো কেউ ত্রাণও দেয় না।

নগরীর বারো কোয়ার্টার এলাকার ঝর্ণা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে এককালীন কিছু অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়। সেই টাকায় একটি টেইলার্স দিয়েছিলেন তিনি।
ঝর্ণা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ আমাদের বাঁকা চোখে দেখে। দোকানে লোকজন আসতে চায় না। পরিচিত লোকজন কিছু আসে, তাদের কাজ করি।
“এখানে কম আয়ের মানুষেরা থাকে। করোনার সময় সেই লোকজনও আসা বন্ধ হয়। এখন একটু একটু কাজ হচ্ছে। কোনো রকমে টিকে আছি।”
চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আয় কমে যাওয়ায় করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে তারা খুব বিপদে পড়েছিল। তারা আমাদের জানিয়েছিল, আমরা ত্রাণের ব্যবস্থা করি।
“প্রতি বছর সেলাই, ব্লক বাটিক, কম্পিউটার ও বিউটিফিকেশন কাজে তাদের ৫০ জন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু এবার মহামারীর কারণে সেটা হয়নি।”
৫০ দিনের এই প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষিতকে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা এবং প্রশিক্ষণ চলাকালে আসা-যাওয়ার খরচ বাবদ দৈনিক ৩০০ টাকা করে আরও ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ২৫ হাজার টাকা।

সমাজসেবা অধিদপ্তরে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩০০ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্য থেকে পঞ্চাষোর্ধ্ব ১৭৭ জনকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা দেন।
পাহাড়তলি এলাকার ইতি নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন বলেন, মানুষ যে টাকা দেয় তা খুবই কম। সেটাও সবাই তো পায় না।
আমবাগান রেল কলোনির বস্তিতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় লিঙ্গের একজন বলেন, “আমাদের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। এক রুমের একটা বাসা ভাড়া দিতে হয় ছয় হাজার টাকা। তারপর আছে খাওয়ার খরচ।
“কালেকশন কমে যাওয়ায় এখন আগের চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। তবু আয় আগের মত হয় না।”
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কল্যাণে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির (বন্ধু) সুপারভাইজার ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহামারীর শুরুর দিকে কেউ কেউ জমানো টাকা দিয়ে চলেছিল। তারপর সব প্রতিষ্ঠান খুললেও আগের মত আর আয় হচ্ছে না তাদের। কেউ কেউ এখন দোকানে পার্টটাইম চাকরি করছে।
“আমরা তাদের চিকিৎসা সেবা এবং এডভোকেসির ব্যবস্থা করি। কেউ প্রশিক্ষণ চাইলে সমাজসেবার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই।”
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা সজীব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানা কারণে সমাজের মূল ধারায় এখনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সম্পৃক্ত হতে পারেনি। সবসময় আমাদের চেষ্টা থাকে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠী যেন বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পায়।
“তাদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষিতও আছেন। যদি কর্মসংস্থান হয় তাহলে এভাবে কষ্ট করে চলতে হবে না। সবার উচিত তাদের কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা।”
-
ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে এবার চট্টগ্রামে মামলা
-
চট্টগ্রামের সাড়ে তিনশ নরসুন্দর ও চর্মকারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
-
জ্বালাও-পোড়াও করবেন না, হেফাজতকর্মীদের বাবুনগরী
-
কোভিড-১৯: চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় পুলিশের নজরদারি
-
চাঁদার জন্য ঠিকাদারকে মারধর, চট্টগ্রামে ছয়জন গ্রেপ্তার
-
চট্টগ্রামে ভাতিজার ‘ঘুষির’ পর চাচার মৃত্যু
-
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছাত্রলীগ কর্মীর মামলায় চবি ছাত্র কারাগারে
-
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসে বিপ্লবীদের স্মরণ
-
ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে এবার চট্টগ্রামে মামলা
-
চট্টগ্রামের সাড়ে তিনশ নরসুন্দর ও চর্মকারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
-
জ্বালাও-পোড়াও করবেন না, হেফাজতকর্মীদের বাবুনগরী
-
চট্টগ্রামে ভাতিজার ‘ঘুষির’ পর চাচার মৃত্যু
-
কোভিড-১৯: চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় পুলিশের নজরদারি
-
চাঁদার জন্য ঠিকাদারকে মারধর, চট্টগ্রামে ছয়জন গ্রেপ্তার
সর্বাধিক পঠিত
- মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ মিথিলার স্বপ্নভঙ্গ
- ছুটি পেয়ে ১০ মাস পর পরিবারের কাছে ওয়াকার
- চূড়ান্ত টেস্ট স্কোয়াডেও শরিফুল, নেই শুভাগত
- তোফায়েল এখন বলছেন, হেফাজত প্রশ্নে তখনই শক্ত হওয়া দরকার ছিল
- ষষ্ঠবার নির্বাচিত শাদের প্রেসিডেন্ট ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ নিহত
- মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ড: সোনারগাঁওয়ের ওসি রফিকুল চাকরিই হারালেন
- ছাত্রদের উসকে দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় ছিলেন মামুনুল: পুলিশ
- কোভিড-১৯: আলমগীর হাসপাতালে
- করোনাভাইরাস: চার দিন পর দৈনিক মৃত্যু একশর নিচে নামল
- ধোনির উপলব্ধি, তার কারণে হারতে পারত দল