কোকেনকাণ্ড: ২১ মাস পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় প্রায় এক বছর নয় মাস পর আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2021, 08:24 AM
Updated : 23 Feb 2021, 08:24 AM

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ জব্দ তালিকার তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ৩ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।”

এর আগে ২০১৯ সালে সবশেষ চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

মঙ্গলবার যে তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা হলেন- আবু মুসা জামাল, ফারুক হোসেন ও মনিরুল ইসলাম। কোকেন পাচার সংক্রান্ত কম্পিউটার, কাগজপত্র জব্দের সময় তাদের সাক্ষী করা হয়েছিল।

২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় করা মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৯ থেকে ২২ মে পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছিল।

আলোচিত এই মামলার আসামিরা হলেন-  চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া, নূর মোহাম্মদের ভাই মোস্তাক আহম্মদ, খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে এম আজাদ এবং সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

এদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন। তার ভাই মোস্তক আহম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান এবং বকুল মিয়াকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। কারাগারে আছেন গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং আতিকুর রহমান। বাকি চার আসামি জামিনে আছেন।

মামলায় র‌্যাবের সম্পূরক অভিযোগপত্রে এই ১০ জনকেই আসামি করা হয়েছিল।

একই ঘটনায় চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটিও অধিকতর তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৯ জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে। তবে সেটিতে এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।

পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে বন্দরের পরীক্ষায় এসব নমুনায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাগারেই নমুনায় তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রামের বন্দর থানায় মাদক আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।

সেসময়ের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান আটজনের বিরুদ্ধে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

এ কারণে ‘তদন্তে ত্রুটি’ আছে উল্লেখ করে আদালত ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর র‌্যাবের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল এ মামলায় অধিকতর তদন্ত শেষে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন র‌্যাব-৭ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

ওই বছরের ১৩ এপ্রিল শুনানি শেষে আদালত সম্পূরক অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নূর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে কোকেন আমদানি করা হয় এবং এই পুরো ঘটনার শুরু থেকেই তিনি জানতেন।