রোববার বন্দর নগরীর সিআরবি শিরীষ তলায় প্রমা আবৃত্তি সংগঠন আয়োজিত বসন্ত উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নওফেল বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি সমাজের আনাচে-কানাচে এখনও সেই কুপমণ্ডুকতা, সাম্প্রদায়িকতা, পশ্চাৎপদ মানসিকতা লুকিয়ে আছে। যার কিছু কিছু উদাহারণ আপনারা প্রায় দেখতে পাবেন।
“এই চট্টগ্রাম ছিল সংস্কৃতির লীলাভূমি। বাঙালি সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের উপাদানগুলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ নওফেল জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশাল কূটনৈতিক বিজয় হচ্ছে, অনেক পশ্চিমা দেশও এখনও ভ্যাকসিন পায়নি। সেই ভ্যাকসিন প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছ থেকে আমরা উপহার পেয়েছি। বাংলাদেশ আরও অনেক ভ্যাকসিন ক্রয় করে নিয়েছে। আপনাদের সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানাই। ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ জীবনযাপন আবারো স্বাভাবিকভাবে শুরু হবে এই আশাবাদ জানাই।”
অনুষ্ঠানে প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, “গত প্রায় এক বছর আমরা দুঃসময় কাটিয়েছি। সেই মহামারীকাল এখনও কাটেনি। মানুষ হাঁফিয়ে উঠেছে। ভিতরে ভিতরে ক্লান্ত হয়ে উঠেছে। এই বসন্ত উৎসব মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।”
কুপমণ্ডুকতা ও সাম্প্রদায়িকতা ঝেড়ে ফেলে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যেতে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার উপর জোর দেন তিনি।
প্রমা’র সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায় নেওয়া প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং প্রমা’র সহ-সভাপতি কঙ্কন দাশ।
নওফেল বিকালে নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম আয়োজিত বসন্ত উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকে ভূষিত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব ডা. উত্তম বড়ুয়া, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল।
বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম'র সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বোধনের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী।
আমবাগান শেখ রাসেল পার্কে বোধন আবৃত্তি পরিষদের অন্য অংশটির অধিবেশন শুরু হয় বর্ণাঢ্য বসন্তবরণ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে।
এসময় নানান রঙের প্ল্যাকার্ড ও ছন্দময় ঢোলবাদনে বোধনের আবৃত্তিকর্মীরা নেচে-গেয়ে রাজপথ রাঙিয়ে তোলে।
বিকেলের অধিবেশনে অতিথি ছিলেন সিএমপি উত্তর উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক, অধ্যাপক ড. গাজী সালাউদ্দিন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক ছাত্রনেতা শওকত হোসাইন।
কথামালার ফাঁকে বসন্তঋতু সুন্দর সুনিপুণতা কণ্ঠে তুলে ধরেন শিল্পী কেশব জিপসী, রিষু তালুকদার, তুলি দাশগুপ্তা, সাদেকুল ইসলাম ছন্দ, বাহার আহম্মেদ, অর্ণব ভট্টাচার্য, চন্দ্রিমা ভৌমিক ও ঋতু সাহা।
একক আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী, দেবাশীষ রুদ্র, ইসমাইল চৌধুরী সোহেল, সঞ্জয় পাল, বিপ্লব কুমার শীল, পলি ঘোষ, সাজ্জাদ হোসেন, বীথিকা বসাক ও ঈশা দে।
নৃত্যে ফাগুনের সমীরণে উদ্বেলিত জয়গানে মঞ্চ দাঁপিয়ে বেড়ায় নৃত্য নিকেতন, এ.বি. নৃত্যাঙ্গন, চিটাগাং ডান্স একাডেমী।
এসময় প্রকৃতির মায়াজালে সুরের পরশ বুলিয়ে দেন যন্ত্রসংগীতে ভায়োলেনিস্ট চিটাগাং, শোভন দাশ ও প্রিয়ম চক্রবর্তী, আনিস মাহমুদ। দলীয় সংগীতে জীর্ণ সময়কে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতির অনন্য মুহূর্ত তুলে ধরেন ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীরা।