বাধার মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবিতে বসন্ত বরণ

চট্টগ্রামের সিআরবিতে বসন্ত বরণের আয়োজনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2021, 09:02 AM
Updated : 14 Feb 2021, 09:09 AM

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মদিবস হওয়ায় উচ্চঃস্বরে গান-বাজনা না করার শর্তেই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আয়োজকরা তা মানেননি।

আয়োজকরা বলছেন, অনুমতি দিলেও গতবারও আয়োজনে বাধা দেয়া হয়েছিল। এভাবে বন্দর নগরীতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদরদপ্তর সিআরবি শিরীষ তলায় প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের আয়োজনে চতুর্থ বারের মত বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়।

কর্মদিবস হওয়ায় সকালে দেড় ঘণ্টা এবং বিকেলে বাকি অনুষ্ঠান আয়োজনের শর্তে অনুমতি দেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

সকাল ১০টার দিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়েলফেয়ার পরিদর্শক রুবাইয়াত হোসেন অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। এসময় একটি নাচের পরিবেশনা চলছিল। তখন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল।

প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলওয়ের ওই কর্মকর্তা এসে খুব চিৎকার শুরু করেন। মঞ্চে নাচ পরিবেশিত হচ্ছিল ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটির সাথে। এরপর ১০ মিনিটের অনুষ্ঠান বাকি ছিল।

“আমি তখন একটি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভে কথা বলছিলাম। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, এখানে কর্তৃপক্ষ কে? এখনই বন্ধ করেন। শর্তের কারণে সকালে আমরা শুধু দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান রেখেছি। এর পাঁচ মিনিট পরই সকালের পর্ব শেষ হওয়ার কথা ছিল। এক পর্যায়ে তিনি সাউন্ড সিস্টেমের সংযোগ খুলে ফেলেন।”

ঘটনার সময় উপস্থিত সময় টিভির সাংবাদিক পার্থ প্রতিম বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হঠাৎ করে রেলের ওই কর্মকর্তা এসে প্রমার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালসহ আয়োজকদের সাথে চেমামেচি শুরু করেন। তিনি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বলেন। এমনকি আর সিআরবিতে অনুষ্ঠান করতে দিবেন না বলেও হুমকি দেন।”

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব রেলের ওয়েলফেয়ার অফিসার মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আয়োজকদের শর্ত দেয়া আছে, জোরে সাউন্ড বক্স বাজাতে পারবে না, মাইক বাজাতে পারবে না। সকালে তো অফিস আওয়ার। শর্ত ভঙ্গ করলে তো হবে না। আমাদের জিএম এবং এজিএম স্যার অফিসে উপস্থিত ছিলেন। উনারা অবজেকশন দেওয়ার পর আমাদের ইন্সপেক্টর সেখানে যায়। তারপর তাদের সাথে বাদানুবাদ হয় বলে শুনেছি।

“আমি ঢাকায় একটি ট্রেনিং এ আছি। অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয় আমার অফিস থেকে। তাহলে আমরা কেন বাধা দেব? আমরা তো মাঠ ব্যবহারের জন্য পয়সাও নিই নি। আয়োজকরা সৃজনশীল মানুষ আশা করি তারা বিষয়টি বুঝবেন।”

সাংস্কৃতিক সংগঠক রাশেদ হাসান বলেন, “চট্টগ্রামের ডিসি হিলে গত কয়েক বছর ধরেই কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয় না। গতবছরও সিআরবিতে আমাদের আয়োজনে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এভাবে একের পর এক বাধা দেয়া সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ করার চেষ্টা কিনা তা সবার ভেবে দেখা উচিত।”

সিআরবিতে বসন্ত উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বিকেলে। চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সিআরবির পাশাপাশি বন্দর নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট এবং আমবাগান শেখ রাসেল পার্কেও বসন্ত বরণের আয়োজন করা হয়েছে।

বোধন আবৃত্তি পরিষদ, চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট মুক্ত মঞ্চে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে।

সকাল নয়টায় সংগঠনের সহ-সভাপতি প্রবীর পালের আবৃত্তির মধ্য দিয়ে আয়োজন শুরু হয়।

এরপর ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ‘সদারঙ্গ’ এর শিল্পীরা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করে। আয়োজনের মধ্যে থাকছে নাচ, গান, আবৃত্তি। শিশুদের জন্য বাইস্কোপ আয়োজন করা হয়েছে।

বিকেলে ঢোল ও শোভাযাত্রায় বসন্ত উৎসবের র্যালি হবে। এরপর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানাজি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, একুশে পদকজয়ী নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার উপস্থিত থাকবেন।

বোধন আবৃত্তি পরিষদের অন্য অংশটি আমবাগান শেখ রাসেল পার্কে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে।

সকালে ৯টায় আবৃত্তি শিল্পী সুবর্ণা চৌধুরীর একক আবৃত্তি দিয়ে আয়োজন শুরু হয়। এরপর দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরপঞ্চম। তারপর একে একে নৃত্য, যন্ত্রসঙ্গীত, কথামালার আয়োজন আছে।

বিকেলে ঢোলের বাদন ও বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন শ্যামল, কবি জিন্নাহ চৌধুরী, নাট্যজন সুচরিত দাশ খোকন এবং সংগঠক সাজ্জাদ হোসেন।