রেজাউলের শপথের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে শাহাদাত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী এম রেজাউল করিম চৌধুরী যখন মেয়র হিসেবে শপথ নিচ্ছিলেন, তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে দেখা গেল পরাজিত প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2021, 11:46 AM
Updated : 11 Feb 2021, 11:46 AM

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান বিএনপির মেয়র প্রার্থী, দলটির নগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত।

নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কক্ষের ইভিএম মেশিনের ফলাফলের ‘প্রিন্টেড কপি’ চাইতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।

শাহাদাত যখন চট্টগ্রামে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে, তখন ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মেয়র পদে শপথ নেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল।

গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রেজাউলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফল অনুযায়ী শাহাদাতের চেয়ে তিন লাখ ভোট বেশি পান তিনি। তবে শাহাদাতের অভিযোগ করছেন, কারচুপি করে তাকে হারানো হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার পর শাহাদাত সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিটা ইভিএম মেশিনের একটি প্রিন্টেড কপি থাকে। যার সাথে নির্বাচন কমিশনের হাতে লেখা একটা কপি থাকে। যেহেতু ১০টি কক্ষে প্রিন্টেড কপি তারা দিতে পেরেছে, অবশ্যই ৪ হাজার ৮৮৫টি কক্ষে তাদের এটা দিতে হবে।

“সেই প্রেক্ষিতে উনাকে বলেছিলাম। কিন্তু উনি বলেছেন, এখান থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এখান থেকে কেন সম্ভব নয়, সেটার ব্যাখ্যা উনি দিতে পারেননি।”

তিনি বলেন, “উনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে আবার অ্যাপ্লাই করতে। কিন্তু উনাদের কথা মতই আমরা এখানে আবেদন করেছিলাম। ১০ দিন পর আজকে এসে সেই রেজাল্ট উনারা দিতে পারেননি। এতে বোঝা যাচ্ছে সেই প্রিন্টেড শিট উনারা দিতে পারবেন না। তার অর্থ নির্বাচনে মহা ভোটডাকাতি করা হয়েছে।”

এ কারণে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন তিনি।

শাহাদাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে ফলাফলের স্বাক্ষরিত যে কপি ছিল, সেটা আমরা তাদের দিয়েছি। এখন তিনি যদি অন্য কিছু চান, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের আবেদন করতে হবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র নির্বাচনে পরাজিত শাহাদাত বলেন, “এই প্রিন্টেড শিট যদি তারা বের করতে পারত, তাহলে একজ্যাক্ট পারসেন্টেজটাও আসত এবং কার কত ভোট সেটাও আসত।”

রেজাউল ‘অনেক ভোট’ কম পেয়েছেন দাবি করে শাহাদাত বলেন, “সম্ভবত যেটা ৩ লাখ ৬৯ হাজার ভোট দেখাচ্ছে, সেখানে ২০-২৫ হাজার ভোট উনি পাইতে পারে ম্যাক্সিমাম। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, সাড়ে তিন লাখ ভোট উনাকে যোগ করে দেওয়া হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। ভোট দিয়েছেন মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩। ভোটের হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ১ হাজার ৫৩টি ভোট বাতিল হয়েছে।

সম্পূর্ণ ভোটগ্রহণ ইভিএমে হলেও প্রায় ১০ ঘণ্টা পর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান।

তাতে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী রেজাউল পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।

শাহাদাত বলেন, “দেশে এখন কোনো ধরনের গণতন্ত্রের অবকাশ মাত্র নেই। ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচনটা হয়ে গেছে প্রশাসন যন্ত্রের সাথে।”

এর আগে ৩১ জানুয়ারিও সংবাদ সম্মেলন করে শাহাদাত দাবি করেছিলেন, নির্বাচনে সাড়ে সাত শতাংশ ভোট পড়লেও নির্বাচন কমিশন তা কারচুপি করে সাড়ে ২২ শতাংশ দেখিয়েছে।